শিরোনাম
শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে লজ্জা নয়

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে লজ্জা নয়

কোষ্ঠকাঠিন্য একটি খুবই কঠিন সমস্যা। এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যার জীবনে কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য হয়নি। কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে অনেকেই লজ্জা পায়। যা মোটেও ঠিক নয়। এরকম অবস্থা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য কী : পায়খানা শক্ত বোঝাতে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য শব্দটি ব্যবহার করি। মেডিকেল সাইন্সের পরিভাষায় পায়খানা সপ্তাহে তিনবারের কম অথবা পরিমাণে কম, শক্ত এবং শুকনা হওয়াকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার পরও যদি সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ করেন, তখন কারণ নির্ণয় জরুরি।

লক্ষণ বা উপসর্গ : মূল উপসর্গটাই হলো শক্ত ও কঠিন মল। এর সঙ্গে নিম্নে উল্লিখিত এক বা একাধিক উপসর্গও থাকতে পারে। * মলত্যাগে অনেক বেশি সময় লাগা

* অনেক বেশি চাপের দরকার হওয়া * অধিক সময় ধরে মলত্যাগ করার পরও অসম্পূর্ণ মনে হওয়া *  এছাড়া আঙ্গুল, বা অন্য কোনো মাধ্যমে মল বের করার চেষ্টা

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ : নানা কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতেই পারে। অনেকের এমনিতে কোনো রোগ ছাড়াই কোষ্ঠকাঠিন্য হয় আবার বেশকিছু রোগের লক্ষণ হিসেবেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কিছু কিছু কারণ জীবনযাপনের পদ্ধতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, আর কিছু কিছু হয়ে থাকে বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবে।

অন্য কারণগুলো হচ্ছে : খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন : আঁশযুক্ত খাবার ও শাক-সবজি কম খাওয়া

* নিয়মিত ফাস্ট ফুড খাওয়া বা বেশি পরিমাণে খাওয়া

* পানি বা তরল খাবার কম খাওয়া * সময়মতো মলত্যাগ না করে চেপে রাখার প্রবণতা। আমাদের দেশের বেশির ভাগ কর্মজীবী মহিলাদের এই অভ্যাসটা আছে। কর্মস্থলের টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত প্রাইভেসি না থাকায় তারা সাধারণত কর্মস্থলে টয়লেট ব্যবহার করেন না * অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপের মধ্যে থাকা  দুর্ঘটনা বা কোনো রোগের কারণে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকা।

কোষ্ঠকাঠিন্যের জটিলতা : দীর্ঘদিন যাবৎ কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে অনেক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- মল ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া * অর্শ বা পাইলস, ফিস্টুলা বা ভগন্দর, এনাল ফিশার বা গেজ রোগ হওয়া * রেকটাল প্রোলাপস তথা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে আসা * প্রস্রাবের সমস্যা * ইন্টেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশন বা অন্ত্রে ব্লক বা প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যাওয়া।

চিকিৎসা : কোষ্ঠকাঠিন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। প্রাথমিকভাবে এর চিকিৎসা হচ্ছে * প্রচুর পানি, শরবত বা তরল খাবার পান করা * বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া * নিয়মিত ব্যায়াম এবং হাঁটাচলা করা * ইসবগুলের ভুষি, বেল, পেঁপে ইত্যাদি খাওয়া যায় * এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী খেলেও উপকার পাওয়া যায় * হালকা গরম দুধ পান করা। এতে উপকার না হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অনেকেই কারণ শনাক্ত না করে বা উপরোল্লিখিত প্রাথমিক ব্যবস্থাগুলো না নিয়েই প্রথম থেকে মল নরম করার ওষুধ এবং মলদ্বারের ভিতরে দেওয়ার ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, যা  উচিত নয়। নিয়মিত এসব ওষুধ ব্যবহার করলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।

লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ

মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা।

সর্বশেষ খবর