মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ডায়াবেটিস ও খাওয়া-দাওয়া

ডায়াবেটিস ও খাওয়া-দাওয়া

সঠিক ডায়েট প্ল্যান করলে ডায়াবেটিসের রোগী এক-আধ দিন রসগোল্লা খেলে এমন কোনো সমস্যা হবে না; তবে যেটা দরকার, তা হলো— পরিমিতিবোধ, সময়ানুবর্তিতা এবং নিয়মানুবর্তিতা। প্রথমেই আসি কার্বোহাইড্রেট প্রসঙ্গে। রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট যেমন— ময়দা, মিহি পলিশড্ চাল, সাদা পাউরুটি ইত্যাদি রোজকার ডায়েট থেকে বাদ দিন। পরিবর্তে বেশি ফাইবারযুক্ত কার্বোহাইড্রেট যেমন— ভুসিযুক্ত আটার রুটি, ঢেঁকি ছাঁটা চাল বা ব্রাউন রাইস, কর্নফ্লেক্সের পরিবর্তে ব্র্যানফ্লেক্স। চিনিযুক্ত ব্রেকফাস্ট সিরিয়ালের পরিবর্তে হাই ফাইবার ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল, ইনস্ট্যান্ট ওটমিলের বদলে রোলড ওটস বা স্টিল কাট ওটস বেছে নিন।

এখানে আরও একটি কথা বলা জরুরি। ব্রাউন ব্রেড বা ব্রাউন রাইসের ক্ষেত্রে দেখে নেবেন সত্যিই খাঁটি জিনিসটি কিনছেন কিনা। তা না হলে কোনো লাভ নেই। আলু ভাজা যতই ভালোবাসুন না কেন, চলবে না। বরং রাঙা আলু, স্কোয়াশ, ফুলকপি খেলেই ভালো। আসলে যুক্তিটা খুব সহজ। একবার বুঝে গেলে দেখবেন নিজেই সুন্দর মেনে চলতে পারছেন। রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর হাই ফাইবার কার্বোহাইড্রেট যেহেতু অনেকটা সময় নিয়ে হজম হয়, তাই শরীর অতিরিক্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। মিষ্টি খেতে যারা ভালোবাসেন তাদের তো সমস্যা বটেই, যারা মিষ্টি ভালোবাসেন না, তাদেরও ডায়াবেটিস হলে মিষ্টির প্রতি আকাঙ্ক্ষা বাড়ে। যেখানেই বাধা, সেখানেই আকর্ষণ প্রবল। তবে, ডায়াবেটিস হলে যে মিষ্টি একেবারে বাদ, তা কিন্তু নয়। মাঝেমধ্যে একটা ছোট সন্দেশ বা রস চিপে রসগোল্লা, দু-এক চামচ পুডিং, কাস্টার্ড বা আইসক্রিম খাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু টোটাল ক্যালোরি ইনটেক খেয়াল রাখতে হবে। আর যেদিন মিষ্টি খাবেন, মিনিট পনেরো বেশি হাঁটবেন। একটু হিসাব-নিকাশ করে চলা আর কী। ফ্যাট বা তেলজাতীয় খাবার খেতে হবে বুঝে শুনে। কিছু ফ্যাট না খেলেও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা সম্ভব নয়। স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্র্যান্স ফ্যাট ডায়াবেটিকদের জন্য তো বটেই কারোর জন্যই ভালো নয়। এদের মধ্যে আছে লিকুইড ভেজিটেবল অয়েল, হোল মিল্ক, রেডমিট ইত্যাদি। এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। এতে ওজনও বাড়ে দ্রুত। আবার নানা শারীরিক সমস্যার জন্যও এ ধরনের খাবার দায়ী। অন্যদিকে রয়েছে অলিভ অয়েল, ক্যানোলা অয়েল, ফ্ল্যাক্স সিড, বাদাম, অ্যাভোকাডো, স্কিমড মিল্ক, দই ইত্যাদি। এগুলো খেতেই পারেন। উচ্চমাত্রায় ফাইবার যুক্ত সবজি যেমন বিন, ব্রকোলি, কড়াইশুটি, পাতাওলা সবজি ইত্যাদি রাখুন ডায়েটে। ডালজাতীয় খাবারও রাখতে পারেন। এগুলোর প্রতিটিই ডায়াবেটিস যাদের তাদের জন্য ভালো। উচ্চ ফাইবারযুক্ত ফল যেমন— পেঁপে, কমলালেবু, আপেল, নাশপাতি, পেয়ারা ইত্যাদি খান। কলা, আম বা আঙুরের মতো ফলে ক্যালরি বেশি থাকে। তাই এই ফলগুলো পরিমিত পরিমাণে খাবেন। একজন ডায়াবেটিকের ক্ষেত্রে বেশিমাত্রায় ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম আর পর্যাপ্ত প্রোটিন থাকতে হবে। অ্যালকোহল এড়িয়ে চলাই ভালো। সারা দিনে ছোট ছোট মিলে ভাগ করে খাবার খান। একবারে বেশি খাওয়ার প্রবণতা মোটেও ভালো নয়। এছাড়া ব্রেন ও হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। পুনা মাছ, স্যামন মাছসহ যে কোনো সামুদ্রিক মাছ, ফ্ল্যাক্স সিড ইত্যাদিতে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড। তাই রোজকার খাবারে এদের মধ্যে যে কোনো একটি থাকলে ভালো হয়।

ডা. শাহজাদা সেলিম, সহকারী অধ্যাপক

এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর