সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শীতের আগমনে আশঙ্কা মনে মনে

ডা. সজল আশফাক

শীতের আগমনে আশঙ্কা মনে মনে

শীতের আগমনে, অগ্রহায়ণের এ সময়ে আবহাওয়ায় শুরু হয়েছে পরিবর্তন। ফলে দেখা যাচ্ছে শেষ রাত এবং ভোররাতে তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাপমাত্রার এই ওঠানামার ফলে কিছু কিছু ভাইরাস শরীরের ওপর আক্রমণের সুযোগ পাচ্ছে। যার ফলে অনেকেই জ্বরসহ সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতের শুরুতে আবহাওয়ায় তাপমাত্রার এ দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে যারা খাপ খাওয়াতে পারছেন না তারাই আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বরসহ সর্দি কাশিতে। ঋতু পরিবর্তনের ফলে জ্বরের এ প্রকোপ নতুন কিছু নয়, সাধারণের কাছে এটি ‘ফ্লু’ হিসেবে সমধিক পরিচিত। আবার কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন শুধু সর্দি-কাশিতে। এ সময়ে বিভিন্ন ফুলের পরাগরেণু উড়ে বেড়ায়, বেশি বেশি সংস্পর্শে আসার সুযোগ পায়। ফলে অনেকেই হাঁচি সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এ ধরনের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত রোগীর নাক চোখ চুলকায়, হাঁচি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে এবং শেষে নাক বন্ধ হয়ে থাকে। এ ছাড়া এ সময় শুষ্ক পরিবেশের কারণে ধুলাবালিও থাকে অনেক বেশি। এই ধুলাবালির কারণে সর্দির সঙ্গে কাশিও দেখা দেয়। এ ধরনের অ্যালার্জি আক্রান্ত রোগীর নাসারন্ধ্রের পার্শ্ববর্তী মাংসপ্লি (ইনফিরিয়র টারবিনেট) ফুলে বড় হয়ে যায়। নাক বন্ধ থাকে। অনেকেরই নাক বন্ধ হয়ে মাথাব্যথাও হতে পারে। কেউ কেউ এতটাই কাশিতে ভুগছেন যে, যার ফলে রাতের ঘুমটুকুও হারাম হয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সর্দি-কাশি দুই-চার দিনের মধ্যে সেরে ওঠে না। কারও কারও তা সারতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। তাছাড়া এ সময়ে কান বন্ধ হয়ে কানে ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে। কারও কারও গলাব্যথাও হয়। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বলে শিশুরা এসব সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হতে পারে। কিছু নিয়ম মেনে চলা, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং কিছু ওষুধপত্রের মাধ্যমে শীতের শুরুতে অ্যালার্জিজনিত নাকের সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অ্যালার্জেনকে কখনো এই পরিবেশ থেকে চিরতরে নির্মূল করা যেমন সম্ভব নয় তেমনি অ্যালার্জেনকে সব সময় এড়িয়ে চলাও প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবে সতর্ক হলে সবকিছু মিলিয়ে ভালো থাকা কোনো কঠিন বিষয় নয়। কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করলেই গলাব্যথা সেরে যায়। হাঁচি সর্দিও জন্য এন্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেলেই কাজ হয়। কাশির জন্য গরম দুধ, গরম পানিতে মধু খেলেই অনেকে ভালো থাকেন। অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় বিভিন্ন ওষুধের যেকোনোটি ওষুধের উপযুক্ততা বিচার করে ব্যবহার করতে হয়। অ্যালার্জির কারণে নাক বন্ধ হলে প্রতিকারের ওষুধও সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়। বন্ধ নাক খুলে দিতে নাকের ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এসব ড্রপ দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা যায় না। তবে সাময়িক ব্যবহারে অবস্থার বেশ উপশম হয়। অনেক সময় আগে থেকেই নাকে অ্যালার্জির সমস্যা থেকে থাকলে স্টেরয়েড জাতীয় স্প্রে নাকের এ অ্যালার্জি সমস্যায় ব্যবহারে উপকার বেশি হয়। সুতরাং ঋতু পরিবর্তনজনিত এসব রোগবালাই দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বরং প্রয়োজন একটু সতর্কতা।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, নাক কান ও গলা বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর