সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

খাদ্যাভ্যাসের কারণেও কিডনি রোগ

ডা. সহেলী আহমেদ সুইটি

খাদ্যাভ্যাসের কারণেও কিডনি রোগ

উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে এবং জীবনযাত্রায় এসেছে পরিবর্তন। এখন আমরা ফাস্টফুডসহ বিভিন্ন তৈলাক্ত খাবার নিজেরাও খাই বাচ্চাদেরও অভ্যস্ত করে তুলছি। আর তাই ছোট শিশুটি বেড়ে উঠছে তার সঠিক ওজনের চেয়ে অতিরিক্ত বা বাড়তি ওজন নিয়ে। এই ওবেসিটিই বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন রোগের কারণ। অতিরিক্ত ওজনের কারণে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হূদরোগ ও কিডনিসহ অন্যান্য মারণব্যাধির ঝুঁকিও বেড়ে চলেছে। শিশুদের ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন করুন এবং নিজেও ফাস্টফুড বা অতিরিক্ত তেলচর্বি পরিহার করে ফলমূলসহ প্রচুর শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তবে যারা ইতিমধ্যেই কিডনি রোগে বিশেষ করে ধীরগতিতে কিডনি রোগে আক্রান্ত, তারা অবশ্যই বেশি পটাশিয়ামযুক্ত ফল (যেমন: ডাব কলা ইত্যাদি) খাবেন না। কিংবা অতিরিক্ত পটাশিয়ামযুক্ত সবজিও পরিহার করবেন। আর কিডনি রোগীরা শাকসবজি দুই ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে অথবা সিদ্ধ করে পানি ফেলে লিচিং পদ্ধতিতে রান্না করবেন। কারণ অতিরিক্ত পটাশিয়াম হলে কার্ডিয়াক Arrythmia থেকে মৃত্যুও হতে পারে। তবে সুস্থ যারা আছেন মনে রাখবেন অতিরিক্ত ওজনই আপনার কিডনি রোগসহ বিভিন্ন মৃত্যুরোগের ঝুঁকির কারণ। আজকাল বেশিরভাগ বাবা-মা দুজনই কর্মব্যস্ত। তাই শিশুটিকে নিজে টিফিন বানিয়ে দিতে পারলে অথবা যে কোনো একটি ফল দিয়ে দিন কিন্তু ফাস্টফুড পরিহার করতে হবে। বাচ্চারা যাতে শুধু কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে গেমস না খেলে হাঁটা চলাফেরা করে খেলাধুলা করে সেদিকে নজর দিন। নিজেরাও কর্মব্যস্ততার মাঝে অন্তত এক ঘণ্টা হাঁটুন যাতে বাড়তি ওজন কিংবা ওবেসিটি না হয়, অতিরিক্ত ওজনের জন্যই আজকাল হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, কিডনি ও হূদরোগ বাড়ছে, যারা দীর্ঘদিন উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশনে ভুগছেন এবং ডায়াবেটিসের দীর্ঘদিনের রোগী আজই কিডনি পরীক্ষা করে জেনে নিন কিডনি সুস্থ আছে কিনা। যারা ইতিমধ্যেই কিডনি রোগী সঙ্গে উচ্চরক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা ব্লাড প্রেসার এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখবেন তাহলে কিডনি রোগও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ধীরগতিতে কিডনি বিকলের প্রধান কারণও ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশন। বাংলাদেশে আকস্মিক কিডনি বিকলের প্রথম ও প্রধান কারণ ডায়রিয়া। ডায়রিয়া হলে পানিশূন্যতা থেকে আকস্মিক কিডনি বিকল হয়। তাই মনে রাখতে হবে, ডায়রিয়া হলে অবশ্যই স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খেতে হবে যাতে পানিশূন্যতা এবং Electrolytes Imbalance না হয় এবং আকস্মিক কিডনি বিকল না হয়। কোনো অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ কিংবা এন্টিবায়োটিক খাবেন না কারণ ব্যথানাশক ওষুধ এবং এন্টিবায়োটিকের কারণেও কিডনি বিকল হতে পারে। মহিলারা প্রায়ই প্রস্রারের ইনফেকশনে ভুগে থাকেন তাই অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি খাবেন। কোনো অবস্থাতেই প্রস্রাব আটকে রাখবেন না এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবেন। তবে কাঁপুনিসহ জ্বর, তলপেট ব্যথা এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হলে প্রস্রাবের R/M/E  & C/S করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

ও হাসপাতাল, ঢাকা। ফোন : ০১৭৯৩৫৯৬১৯৭

সর্বশেষ খবর