শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শীতকালীন শ্বাসকষ্ট ও করণীয়

অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ

শীতকালীন শ্বাসকষ্ট ও করণীয়

যারা সুস্থ-সবল মানুষ তাদের জন্য এই শীত আনন্দের। আর যারা বক্ষব্যাধি তথা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত তাদের জন্য এই শীত অনেক সময় নিরানন্দের।

বায়ুমণ্ডলের দূষণ আমাদের দেশের অনেক শহরেই ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে। পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয় এই শীতের মৌসুমে। কোনো কোনো শহরে আবার সালফার-ডাই অক্সাইড (একটি মারাত্মক দূষণকারী গ্যাস) এই সময়ে বাতাসে বেশি থাকে। সেটি ফুসফুসে ঢুকে ভয়ানক প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হাঁপানির টান বেশ বেড়ে যায়। সূক্ষ্ম ভাসমান পদার্থের কণা এই শীতের সময় ভারী আবহাওয়ায় অনেক পরিমাণ থাকে। আর তাই আমাদের এই শহরগুলোতে শীতের সময়ে হাঁপানি এবং ফুসফুসের ব্যাধি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। আমার পরামর্শ হলো এই সময়টা যদি সম্ভব হয় তবে কিছুদিনের জন্য গ্রামের মুক্ত সুন্দর আবহাওয়ায় বেড়িয়ে আসতে পারেন। ঋতু পরিবর্তন বিশেষ করে শীতের সময় বা শীতের শুরুতে হাঁপানির লক্ষণগুলো বিশেষভাবে চোখে পড়ে। যাদের রোগটি নতুন করে শুরু হয় তাদের এই আক্রমণটি দিনের যে কোনো সময় হঠাৎ হতে পারে, তবে সাধারণত ভোরের দিকেই শুরু হয়। প্রথম প্রথম শ্বাসকষ্ট হালকা ধরনের এবং খুব ক্ষণস্থায়ী হতে পারে। এই ধরনের হাঁপানিকে এক্সট্রিনসিক ধরনের বলা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কতগুলো লক্ষণ আগেই দেখা যায়। আবার অনেকের গলা খুসখুস করে, ব্যথা ও জ্বর হয় এবং বেশি হতে থাকে বা ঢোক গিলতে কষ্ট হয়। হাঁপানি যদি পুরনো হতে থাকে এর লক্ষণ উপসর্গগুলোও কিন্তু কিছু কিছু পরিবর্তিত হতে থাকে। আগে যেমন হাঁচি এবং নাক দিয়ে অবিরাম পানি পড়তে থাকত সেটা কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। হাঁপানির কষ্টটাও সে অনুপাতে বাড়ে। নাকে বিছানা ঝাড়ার ধুলা গেলে আগে হাঁচির যে দমকটা আসত তা না হয়ে সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আমরা সুচিকিৎসার মাধ্যমে হাঁপানি যদি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি তবে কিন্তু রোগী তার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। কারও কারও হাঁপানির আক্রমণ আবার অন্য রকমের উপসর্গ দিয়ে শুরু হয়। তাদের এগুলো হলো ইনট্রিনসিক ধরনের। তাদের এই শ্বাসকষ্ট বহু সময় ধরে আস্তে আস্তে ক্রমাগতই চলতে থাকে। মাঝে মাঝে কখনোবা একটু বাড়ে আবার মাঝে মাঝে কখনো একটু কমে। তাদের হাঁচি-কাশি, নাক চুলকানো বা পানি পড়া নাও থাকতে পারে। এদের বুক থেকে সাঁ সাঁ শব্দ খুব বেশি হয়তো শোনা যায় না কিন্তু শ্বাসকষ্টটাই হয়ে দাঁড়ায় খুব ভয়ঙ্কর। শীত আসছে, তাই শীতের জামা-কাপড় পরার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে শীতের জামা-কাপড় ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে। বাক্স থেকে বের করে সরাসরি পরবেন না। লেপ প্রথমে ৪-৫ দিন ক্রমাগত রৌদ্রে দিন এবং ঝাড়ুন। কম্বল ব্যবহার করা লেপের চেয়ে ভালো। তাই সম্ভব হলে কম্বল কভার ব্যবহার করুন। যাদের হাঁপানি আছে তারা এই সময় ঠাণ্ডা পানি এবং পানীয় খাবেন না। অল্প গরম পানি পান করুন। প্রচণ্ড শীতে ঘর থেকে বের হলে মাফলার ব্যবহার করা ভালো। তাই শীতের এই সময়টাতে সবাইকে যত্নবান হতে হবে। কারণ প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

লেখক : বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইউনাইটেড  হাসপাতাল, ঢাকা। ফোন : ০১৭৪৫-৯১৯৬৬৪

সর্বশেষ খবর