রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কোল্ড অ্যালার্জির সাতকাহন

অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস

কোল্ড অ্যালার্জির সাতকাহন

ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। ঋতুর পরিবর্তনে আবহাওয়ারও পরিবর্তন হয়। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে আমাদের অনেকেরই স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সাধারণত শীতকালে আমাদের দেশে বিভিন্ন বয়সের মানুষের শীতকালীন কিছু উপসর্গ দেখা দেয়, কোল্ড অ্যালার্জি বা শীত সংবেদনশীলতা। আমরা দেখে থাকি শীত এলেই অনেক শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন বা শীতজুড়ে অসুস্থ থাকেন। এর বেশির ভাগ হয়ে থাকে কোল্ড অ্যালার্জির কারণে। ঠাণ্ডা বাতাস, সিগারেটের ধোঁয়া, সুগন্ধি, তীব্র গন্ধ, পত্রিকা বা বই-খাতার ধুলা যাতে মাইট থাকে, ফুলের রেণু মোল্ড ইত্যাদির উপস্থিতি অনেকেই একেবারে সহ্য করতে পারেন না। এসবের উপস্থিতি শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি বা অ্যাজমা, সর্দি ইত্যাদির দেখা দেয়। এসব বিষয়কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অ্যালারজেন বলা হয়। এসব অ্যালারজেনজনিত উপসর্গকে অ্যালার্জি বলে। প্রচণ্ড শীতেও অনেকের জন্য অ্যালারজেন হিসেবে কাজ করে এবং এ কারণে সৃষ্ট উপসর্গকে কোল্ড অ্যালার্জি বলা হয়।

কেন হয় : আমাদের নাসারন্ধ্র ও শ্বাসনালিতে স্নায়ুকোষের কিছু রিসেপ্টর আছে। এই রিসেপ্টরগুলো আবার ভ্যাগাস নার্ভ (এক) জোড়া নার্ভ যা শ্বাসনালি ও কণ্ঠনালির মাংসপেশির সংকোচন ও প্রসারণকে উদ্দীপ্ত করে এর সঙ্গে সংযুক্ত। ইতিপূর্বে উল্লিখিত অ্যালারজেনগুলো শ্বাসনালির রিসেপ্টর নার্ভকে উদ্দীপ্ত করে। ফলে শ্বাসনালির মাংসপেশির সংকোচন ঘটে এবং শ্বাসনালি সরু হয়ে যায়, তখন রোগীর শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি দেখা দেয়। শীতকালে কেন এ উপসর্গ বেশি হয় তা এখনো পরিপূর্ণভাবে জানা যায়নি। তবে অনেক রোগীর সামগ্রিক অবস্থা পরীক্ষা করে কিছু জিনিস

চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। যেমন— আবহাওয়ার অবস্থা, দ্রুত তাপমাত্রা এবং বায়ুচাপের পরিবর্তন, উচ্চ আর্দ্রতা মোল্ড ও মাইট-এর বংশ বিস্তারের জন্য উপযোগী, যা শীতকালীন রোগগুলোর কারণগুলোর অন্যতম।

উপসর্গসমূহ : নাক দিয়ে পানি পড়ে, নাক চুলকায়, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বাঁশির মতো আওয়াজ বের হওয়া, বুক চেপে আসা।

কী করণীয় : যে কারণে এ উপসর্গগুলো দেখা দেয় অ্যালার্জি টেস্ট করে কারণ নির্ণয় করে তা পরিহার করে চলা উচিত। ঠাণ্ডা বাতাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এক ধরনের মুখোশ (ফিল্টার মাস্ক) বা মুখবন্ধনী ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ফ্লানেল কাপড়ের তৈরি এবং মুখের অর্ধাংশসহ মাথা, কান ঢেকে রাখে। ফলে ব্যবহারকারীরা উত্তপ্ত নিঃশ্বাস গ্রহণ করতে পারেন। বর্তমানে ভ্যাকসিন পদ্ধতির চিকিৎসাকে অ্যালার্জিজনিত রোগের অন্যতম চিকিৎসা বলে অভিহিত করা হয়। এটাই অ্যালার্জি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার অন্যতম ও গ্রহণযোগ্য চিকিৎসা পদ্ধতি।

লেখক : অ্যালার্জি ও অ্যাজমা রোগবিশেষজ্ঞ, দি

অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা সেন্টার। পান্থপথ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর