বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কফ-কাশির নেপথ্য কারণ

অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ

কফ-কাশির নেপথ্য কারণ

প্রায় সব বক্ষব্যাধিতেই কফ-কাশি দেখা দেয়। কিছু হৃদরোগেও কফ-কাশি লেগে থাকে। প্রত্যেকের জীবনেই কাফ-কাশির কিছু না কিছু অভিজ্ঞতা থাকবেই। প্রশ্ন হলো কফ-কাশি কেন হয়? মানুষের দেহে দুটি ফুসফুস রয়েছে। এ ফুসফুসগুলোর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য বড়-ছোট শ্বাসনালি। সেই শ্বাসনালি বা ব্রঙ্কাস থেকেই তৈরি হয় কফ। কফ-কাশির নাম নিলে যে রোগের কথা প্রথমেই মনে আসে সেটি হলো যক্ষ্মা। যক্ষ্মা হলে কাশি লেগেই থাকে। প্রথমদিকে কফ পাতলা শ্লেষ্মা জাতীয় থাকে। অনেক সময় জীবাণু সংক্রমিত হয়ে সেটা থেকে হলুদ হয়ে যায়। একটি রোগী যদি তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অবিরাম কাশতে থাকে তবে তাকে অবশ্যই কফ পরীক্ষার জন্য তাগিদ দিতে হবে। কফে যদি যক্ষ্মা জীবাণু ধরা পড়ে তবে তো কথাই নেই। চিকিৎসক সঙ্গে সঙ্গে যক্ষ্মার ওষুধ শুরু করে দেবেন। অনেক ক্ষেত্রে আমরা পর পর তিন দিন কাফ পরীক্ষা করতে রোগীকে উপদেশ দিই। যদি এই তিন দিনের কফে যক্ষ্মা জীবাণু ধরা না পড়ে তাহলে বিশ্ব স্বাস্থ্য  সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী তিনি যক্ষ্মা রোগী নন। কিন্তু অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, মাত্র দশ শতাংশ যক্ষ্মা রোগীর কফে যক্ষ্মা জীবাণু ধরা পড়ে। অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যক্ষ্মা রোগ নির্ণিত হয় এক্স-রে পরীক্ষার ফলাফলের উপরে ভিত্তি করে। এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, এমন শত-সহস্র রোগী আছেন যারা শুধু এক্স-রেতে কিছু দাগ থাকার কারণে যক্ষ্মার ওষুধ মাসের পর মাস খেয়ে চলেছেন। অনেক সময় দেখা যায়, তার কোনো দিন যক্ষ্মাই হয়নি। অর্থাৎ অন্যান্য জীবণু বা ফাঙ্গাস দিয়ে নিউমোনিয়া হয়েছিল। তাই এক্স-রে করে যক্ষ্মা নির্ণয় করতে হলে ব্যাপক অভিজ্ঞতার খুবই প্রয়োজন। এরপর আসা যাক, ব্রঙ্কিএকটেসিসের কথায়। ব্রঙ্কিএকটেসিস নামক রোগটিতে পাকা পাকা হলুদ কফ নির্গত হয়। প্রধানত সবার দিকেই এ দুর্গন্ধযুক্ত কফ বের হয়ে থাকে। ফুসফুসে এনএরোবিক জীবাণু সংক্রমণের ফলে এই দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। এ রোগের অন্যতম লক্ষণ হলো কফের সঙ্গে নিয়মিত রক্ত যাওয়া। প্রচুর সংখ্যক এ ধরনের রোগীকে যক্ষ্মা ভেবে ভুল করে যক্ষ্মার ওষুধ খাওয়ানো হয়ে থাকে। ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এমন একটি রোগ যা পরিবেশ দূষণ এবং মূলত ধূমপানের জন্য হয়ে থাকে। এ রোগে শ্বাসকষ্ট হলো অন্যতম প্রধান লক্ষণ। তবে কফ-কাশির সমস্যা লেগেই থাকে। কফ প্রথমে অল্প আঠালো এবং পিচ্ছিল হয়ে থাকে। পরে জীবাণু সংক্রমিত হয়ে কফ বের হতে চায় না। একটু কফ বের হয়ে গেলে রোগী শ্বাস যন্ত্রণা থেকে আরাম পায়। নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর কফ আবার আলাদা ধরনের হয়। কখনো সাদা কখনো হালকা হলুদ। নিউমোনিয়ার এক পর্যায়ে কফের মধ্যে মরিচার মতো লাল রং মিশ্রত থাকে। ফুসফুসের ক্যান্সারেও কফ থাকে। কফে ছিঁড়ে ছিঁড়ে রক্ত যায় এবং বুকে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে। এ ধরনের রোগের শেষের দিকে রোগীর কাশি অনেক সময় ভিন্ন শব্দে শুনতে পাওয়া যায়। যাকে Bovine Cough বলে। ফুসফুসের ফোঁড়া বা Lung Abscess হলে কফ পেকে হলুদ হয়ে যায় এবং অনেক সময় কফে দুর্গন্ধ থাকে। শীতকালে অনেকে কাফ-কাশিতে ভুগে থাকেন, যাকে Winter Cough বলে।  যারা ক্যানভাসার কিংবা উচ্চৈঃস্বরে বক্তৃতা করেন তাদের গলায় সব সময় ফেরিনজাইটিস হয়ে কফ-কাশি লেগেই থাকে। তাই কফ-কাশিকে রোগ মনে না করে রোগের  লক্ষণ মনে করে প্রকৃত রোগ নির্ণয় করাই শ্রেয়।

লেখক : বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইউনাইটেড

হাসপাতাল, ঢাকা। ফোন : ০১৭৪৫-৯১৯৬৬৪

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর