শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হৃৎপিণ্ডের সুস্থতায় করণীয়

হৃৎপিণ্ডের  সুস্থতায় করণীয়

হৃৎপিণ্ড একটি থলের মতো অঙ্গ। এই থলের মধ্যেই প্রচুর পরিমাণে রক্ত জমা হয় এবং এই থলে সংকোচনের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে সারা শরীরে সরবরাহ করে থাকে। আদতে এই থলেটি হলো একটি মাংসপেশি দ্বারা গঠিত থলে বা থলের আবরণ হলো হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি। যদিও থলের মধ্যে প্রচুর রক্ত সবসময় ভর্তি থাকে কিন্তু তা থেকে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি রক্তপ্রবাহ বা অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না। কারণ রক্তপ্রবাহের কাজটি অতিশয় সূক্ষ্ম বা অণুবীক্ষণিক পর্যায়ে ঘটে থাকে। তাই হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে, শরীরের অন্যসব অঙ্গের মতো রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত সরবরাহ গ্রহণ করে থাকে, মানে রক্তনালির দ্বারা রক্ত সরবরাহের মাধ্যমেই হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণ করে থাকে এবং এই রক্তপ্রবাহের মাধ্যমেই হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে উৎপাদিত বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশিত বা অপসারিত  হয়ে থাকে। হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে ব্লক হওয়া মানে ওই রক্তনালি হৃৎপিণ্ডের যে অংশে রক্ত সরবরাহ করে থাকত সেই অংশে রক্ত সরবরাহের ঘাটতি দেখা দেওয়া, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থাকে ইসকেমিয়া বা ইসকেমিক হার্টডিজিজ বা করোনারি (হৃৎপিণ্ড) আর্টারি (রক্তনালি) ডিজিজ বলা হয়ে থাকে, যা সাধারণ মানুষ হার্ট ব্লক হিসেবেই চিনে থাকে। হৃৎপিণ্ডের ছোট ছোট রক্তনালিগুলো একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। যেমন পাড়া-মহল্লার একদিকের রাস্তাগুলো অন্যদিকের রাস্তাগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো বাসার লোকজন তাদের অবস্থানগত কারণে একদিকের রাস্তাই সব সময় ব্যবহার করে থাকে। অনুরূপভাবে হৃৎপিণ্ডে একটি নির্দিষ্ট অংশ রক্ত সরবরাহের জন্য অবস্থানগত সুবিধার জন্য একটি বড় রক্তনালি থেকেই রক্ত সরবরাহ গ্রহণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে যদি কোনো কারণে ওই রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত সরবরাহ গ্রহণ করতে না পারে, তবে প্রাকৃতিকভাবেই হৃৎপিণ্ডের অন্য রক্তনালি থেকে রক্তপ্রবাহের পথ খুলে যায়। যদি কখনো অতি দ্রুত (হঠাৎ) কোনো রক্তনালির মধ্যে ব্লক সৃষ্টি হয় তখন বিকল্প পথে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের সুযোগ না থাকায় হৃৎপিণ্ডের একটি অংশ (যা ব্লক হওয়া রক্তনালির সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল) নষ্ট হয়ে যায় বা মাংসপেশির কোষগুলো মরে যায়। এই অবস্থাকে হার্টঅ্যাটাক বা  মাইকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন বলা হয়ে থাকে এবং এই অবস্থা প্রায়ই জীবনঘাতী হয়ে থাকে। তবে সাধারণভাবে যা ঘটে থাকে, তা হচ্ছে রক্তনালিতে কোলেস্টেরল নামক পদার্থ খুব ধীরগতিতে (বছরকে বছর ধরে) ব্লক হতে থাকে। এই অবস্থায় ওই রক্তনালির সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল অংশ অন্য পথে রক্ত সরবরাহ গ্রহণ করতে থাকে। যাদের হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে ব্লক সৃষ্টি হয়েছে তারা যদি নিরাপদ মাত্রার কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করতে থাকেন, তার সঙ্গে যদি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, তারা যদি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেন, তারা যদি ধূমপান বর্জন, তারা যদি হূদবান্ধব খাদ্যাভ্যাস অনুশীলন করেন, তারা যদি টেনশনমুক্ত থাকেন, তাহলে ব্লক নিয়েও অনেকাংশে  সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যেতে পারে।

ডা. এম. শমশের আলী, সি. কনসালট্যান্ট,

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল  এবং মুন ডায়াগনস্টিক।

সর্বশেষ খবর