শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

অসুখ যখন শিশুদের ফুসফুসে

ডা. সজল আশফাক

অসুখ যখন শিশুদের ফুসফুসে

‘ব্রংকিওলাইটিস’ শিশুদের ফুসফুসে এক ধরনের ভাইরাসজনিত অসুখ। ফলে আক্রান্ত শিশুরা ভয়ানক কাশি ও শ্বাসকষ্টের শিকার হয়। ‘ব্রংকিওলাইটিস’ অধিকাংশ ক্ষেত্রে আরএসভি নামের ভাইরাস দিয়ে সংক্রমিত হয়। সাধারণত দুই বছরের কম বয়সী শিশু, যাদের বয়স ছয় মাসের কম, তারাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। যেসব শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানো হয়নি, যারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকে, যাদের জন্মের সময় ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম ছিল, তাদের এ রোগে ভুগতে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া আর্থিক অসচ্ছলতা, দূষিত ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এমনকি বাবা-মায়ের ধূমপানের জন্যও ছোট্ট শিশু ‘ব্রংকিওলাইটিসে’ আক্রান্ত হতে পারে। বছরের যে কোনো সময় এ রোগ হতে পারে। তবে শীত, বসন্ত এবং কখনো কখনো বর্ষার শুরুতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত শিশুর নাক দিয়ে পানি ঝরে, হাঁচি থাকে, সঙ্গে হালকা জ্বরও থাকতে পারে। পরবর্তী সময় কাশি, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া (যা মিনিটে ৫০-৬০ বারের বেশিও হতে পারে), শ্বাসকষ্ট, বুক দেবে যাওয়া, এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বুকে শোঁ শোঁ শব্দ বা বাঁশির আওয়াজও হতে পারে। আক্রান্ত শিশু কান্নাকাটি করে, অস্থির থাকে। শ্বাসকষ্টের জন্য তাদের খেতে ও ঘুমাতে সমস্যা হতে পারে। কারও কারও দ্রুত শ্বাসের সঙ্গে হৃদস্পন্দনও বেড়ে যায়। উপসর্গ দেখেই একজন বিশেষজ্ঞ এ রোগ নির্ণয় করতে পারে।  রক্ত পরীক্ষা এবং বুকের এক্স-রে রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।  উপসর্গ সঙ্গে শারীরিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে যদি দ্রুত রোগ নির্ণয় সাপেক্ষে দ্রুত চিকিৎসা করা যায়। এতে অহেতুক ইনজেকশন আর এক্স-রে করানোর বিষয়টি এড়ানো যায়। তীব্র ‘ব্রংকিওলাইটিসে’ আক্রান্ত শিশুর কোনো মারাত্মক জটিলতা না থাকলেও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। প্রয়োজনে অক্সিজেন, নেবুলাইজেশন, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সিরাপ দিতে হবে। এ সময় শিশু ঠিকমতো খেতে না পারলে প্রয়োজনে নাকে নল দিয়ে খাবার দিতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিরায় স্যালাইনও দিতে হয়। সম্ভব হলে শিশুকে অবশ্যই ঘন ঘন বুকের দুধ ও পুষ্টিকর খাবার পান করাতে হবে। শোয়ানোর সময় মাথার নিচে বালিশ দিয়ে মাথা কিছুটা উঁচু রাখতে হবে। নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। নাক বন্ধ থাকলে সাধারণ স্যালাইন ড্রপ দিতে হবে। সাধারণত এ রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যয়বহুল অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশনের প্রয়োজন নেই।  হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের পালস অক্সিমেট্রি দিয়ে রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারা যে কোনো সময়ই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালা

 

সর্বশেষ খবর