শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন

পায়ে নানা ধরনের আঘাত লাগার ঝুঁকি থাকলেও আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পায়ের তেমন একটা যত্ন নিই না। তাই ডায়াবেটিস ব্যক্তিদের অনেকেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাছাড়া ডায়াবেটিসজনিত পায়ের সমস্যা যেমন ইনফেকশন, ক্ষত হওয়া, গ্যাংগ্রিন ইত্যাদি ডায়াবেটিস রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার একটা বড় কারণ।

পায়ের সমস্যার প্রাদুর্ভাব : ডায়াবেটিস ব্যক্তিদের ৩-৮% * একবার ক্ষত হলে পরবর্তী ৫ বছরে ক্ষত হওয়ার ঝুঁকি ৫০-৭০% বেড়ে যায় * ডায়াবেটিস রোগীর পা কেটে ফেলার তো সমস্যার ৮৫%ই শুরু হয় ছোট ক্ষত দিয়ে * শরীরের নিম্নাঙ্গ কেটে ফেলার কারণগুলোর ভিতর ৫০-৭০%ই হয় ডায়াবেটিসজনিত জটিলতার কারণে। ডায়াবেটিসজনিত পায়ের ক্ষত

শুকাতে ১০-১৪ সপ্তাহ সময় লাগে।

অন্যান্য কারণ : পায়ের জুতা সঠিক না হলে * পায়ের যথেষ্ট যত্ন না নিলে * পায়ে আঘাত লাগলে * ধূমপান/তামাক গ্রহণ করলে।

উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পা : নিচের যে কোনো একটি বিদ্যমান থাকলে সেটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পা এবং সে ক্ষেত্রেবিশেষ যত্নবান হতে হবে।

* পায়ের রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়া বা কমে যাওয়া * পায়ের অনুভূতি না থাকা বা কমে যাওয়া * আকৃতিগত অসামঞ্জস্য সৃষ্টি হওয়া  * পা নাড়াচাড়া করতে না পারা  * আগে কোনো ক্ষত হয়ে থাকলে  * কোনো কারণে কেটে ফেলা।

নিজে পা পরীক্ষা : সম্ভব হলে প্রতিদিন পা পর্যবেক্ষণ করা, বিশেষ করে উপরের দিক, পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে এবং পায়ের তলা ভালোভাবে পরীক্ষা করা জরুরি  * অনুভব করা এবং খুঁজে দেখা- পায়ে কোনো ক্ষত, ফোসকা, ঘা, রং বদলে যাওয়া বা ছড়ে যাওয়া আছে কিনা  * পায়ের তলা দেখার জন্য প্রয়োজনে বন্ধু/পরিবারের অন্য সদস্য/আয়নার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

পায়ের যত্নের উল্লেখযোগ্য বিষয় : পা কখনো শুকনো খসখসে রাখা যাবে না, প্রয়োজনে লোশন বা ভ্যাসলিন ব্যবহার করতে হবে * পায়ের আঙ্গুলের মাঝের জায়গাগুলো যাতে ভেজা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি * পায়ের নখগুলো খুব বেশি ছোট করা ঠিক নয়, বিশেষ করে নখের কোণা গভীর করে কাটা উচিত নয় * বেশি গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখা বা পরিষ্কার করা উচিত নয় * কখনই খালি পায়ে থাকা উচিত না * জুতা অবশ্যই নরম, মাপমতো হওয়া জরুরি * মোজা অবশ্যই সুতা বা উলের হওয়া উচিত এবং মোজার উপরের দিকের রাবার খুব বেশি টাইট হওয়া উচিত নয় * নতুন জুতা কেনার সময় বিকালের দিকে কেনা উচিত এবং অবশ্যই মোটা মোজা পরে সাইজ পরীক্ষা করা উচিত * প্রথম দিনই দীর্ঘসময় নতুন জুতা পরে না থাকাই

শ্রেয় * পায়ে যে কোনো ধরনের পরিবর্তন

দেখা দিলে অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

যখন জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন : পায়ে ব্যথা হওয়া * পা লাল হওয়া বা রং পরিবর্তন হওয়া

* পা খুব গরম হয়ে যাওয়া * পায়ে কোনোরকম দুর্গন্ধ হওয়া * পা থেকে কোনো ধরনের রস নিঃসৃত হওয়া * পায়ে ক্ষত বা ফোসকা দেখা দেওয়া * অন্য যে কোনো সমস্যা হওয়া।

যা করা উচিত : * প্রতিদিন পা পরীক্ষা করা * সঠিক জুতা/স্যান্ডেল পরিধান করা * জুতা অবশ্যই মোজাসহ পরিধান করা * জুতা পরার আগে কোনো লোহার টুকরা/ ইটের টুকরা আছে কিনা দেখা * ধর্মীয় স্থান যেখানে খালি পায়ে হাঁটতে হবে সেখানে সকালের দিকে ভ্রমণ করা * নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।

যা করা উচিত নয় * খালি পায়ে কখনোই থাকা যাবে না, এমনকি ঘরের ভিতরেও না * সরু প্রান্তবিশিষ্ট জুতা ব্যবহার করা * নিজে নিজে কোনোরকম ওষুধ দিয়ে কর্ণ/ক্যালাসের চিকিৎসা করা * ধূমপান/তামাক খাওয়া।

ডা. শাহজাদা সেলিম, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর