বয়স ৪০ পার হয়ে গেছে, আপনি হাই ব্লাড প্রেসার বা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, মাঝে মাঝে বুকের মাঝখানে অথবা বামপাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, বিশেষ করে জোরে হাঁটতে গেলে বা ভরা পেটে হাঁটতে গেলে অথবা তাড়াহুড়া করে কোনো কাজ করতে গেলে। এমন হলে আপনি কোন গ্যাসের ওষুধ খান এবং অল্প সময়ের মধ্যে আপনার ব্যথা নিরাময় হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিত যে এটা গ্যাসের ব্যথা তাই সব সময় গ্যাসের ওষুধ সঙ্গে রাখেন বা নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ সেবন করেন। এ ধরনের রোগীর সংখ্যা আমাদের দেশে অনেক, যারা প্রায় সবাই আপনার মতো চিকিত্সা গ্রহণ করে ভালো থাকার চেষ্টা করে। আমি বলব আপনার এ অবস্থা হলে আপনি গ্যাসের ওষুধ না খেয়ে একটু চুপ করে বসে পরুন বা এক গ্লাস পানি পান করে বিশ্রাম গ্রহণ করুন। যদি এতে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে আপনার বুকের ব্যথা বা উপরি পেটের ব্যথা কমে যায় তবে আপনার এ ব্যথা যে গ্যাসের ব্যথা নয় তা নিশ্চিত হওয়া যাবে এবং খুব সম্ভব তা এনজিনা। হৃিপণ্ডে রক্ত সরবরাহের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত হলে মানুষ এক ধরনের ব্যথা অনুভব করে যা প্রায় সময়ই তীব্র ধরনের হয়ে থাকে, যাকে চিকিত্সকরা এনজিনা বলে অভিহিত করে থাকেন। সাধারণভাবে এ ব্যথা বুকের মাঝখানে অনুভূত হয়, তবে ব্যক্তিভেদে তা বুকের বামপাশ বা ডানপাশ বা উপরি পেটে অথবা সারা বুকে অনুভূত হতে পারে। ব্যথা তীব্র হলে তা গলা, চোয়াল, হাত, পিঠ, কাঁধ অথবা পেটের উপরের অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় এনজিনার ব্যথা শুধু পরিশ্রমকালীনই দেখা দিয়ে থাকে। তবে চরম পর্যায়ে বিশ্রামকালীনও তা অনুভূত হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে একটু বিশ্রাম নিলে খুব তাড়াতাড়ি ব্যথা দূরীভূত হয়ে যায়, তবে চরম পর্যায়ে তা সহজে দূরীভূত হয় না। এনজিনার ব্যথার সঙ্গে বুক ধড়ফড় করা বা শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভূত হয়ে থাকে এবং ব্যথা দূরীভূত হয়ে গেলে তার সঙ্গে সঙ্গে বুক ধড়ফড় এবং শ্বাসের অসুবিধাও দূরীভূত হয়ে যায়। এনজিনার ব্যথা অনেক সময় এত বেশি তীব্র হয়ে থাকে যে, কারও কারও ব্যথার সময়ে ভীতির সঞ্চার হয় এবং কেউ কেউ মৃত্যু ভয়ে পতিত হয়। কাজের অত্যধিক চাপ, টেনশন, মানসিক অশান্তি, দুঃসংবাদ শোনা বা ভয়ার্ত কোনো ঘটনা অবলোকন করা বা বর্ণনা শোনা, নিকট আত্মীয় কারও মৃত্যু সংবাদ বা কোনো দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া ইত্যাদি কারণে এনজিনার ব্যথার প্রকোপ ও তীব্রতা দুটোই বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সাধারণ মানুষ পেপটিক আলসার ডিজিজকে গ্যাস বা গ্যাস্ট্রিক বলে আখ্যায়িত করে থাকেন, যা নিরাময়ের ওষুধ হিসেবে এন্টাসিড জাতীয় ট্যাবলেট বা তরল এন্টাসিড রেনিটিডিন জাতীয় বড়ি : রেনিসন, রেনিটিড, ওমিপ্রাজল জাতীয় ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খেয়ে থাকে। এছাড়া প্যান্টোপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, রেবিপ্রাজল, ডমপেরিডন : ওমিডন, পেরিডন, পেরিগাট ইত্যাদি সচরাচর সেবন করে থাকে। পাকস্থলিতে উত্পাদিত এসিডের প্রভাবে এ রোগ সৃষ্টি হয় বলে এসিডের উত্পাদন ও প্রতিক্রিয়া রোধের জন্য উপরোল্লিখিত ওষুধসমূহ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গ্যাসের ব্যথা সাধারণত মধ্যম মেয়াদি ব্যথা যা নিরাময় হতে এক বা একাধিক ঘণ্টা সময় লাগে এবং এনজিনার ব্যথা স্বল্প মেয়াদি ব্যথা যা আরোগ্য হতে দুই-চার মিনিট বা সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট সময় লাগতে পারে। সুতরাং মনে রাখতে হবে যে, ‘গ্যাসের ব্যথা ঘণ্টায় সারে’ আর ‘এনজিনার ব্যথা মিনিটে সারে’ এবং এনজিনার ব্যথা হৃদরোগের সতর্কবার্তা। সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম। যে কোনো রোগের প্রাথমিক অবস্থা থেকে চিকিত্সা নিলে সুস্থতা লাভ সহজ হয়। অন্যথায় জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।