সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

অপ্রতুল চিকিৎসা ও বুক ব্যথা

অপ্রতুল চিকিৎসা  ও বুক ব্যথা

আপনি হৃদরোগে ভুগছেন, চিকিৎসকের পরামর্শমত ওষুধপত্র সেবন করছেন কিন্তু আপনার বুকের ব্যথা লাঘব হচ্ছে না। এ অবস্থায় আপনার আবারও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। কারণ আপনার চিকিৎসা সঠিক হচ্ছে না বলেই ধরে নিতে হবে। হৃদরোগ যদিও আরোগ্য হওয়ার মতো কোনো অসুস্থতা নয়, তবুও চিকিৎসা গ্রহণের একটা মূল উদ্দেশ্য হলো হৃদরোগের উপসর্গ থেকে মুক্ত থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন অব্যাহত রাখা। অপ্রতুল চিকিৎসাই এ ক্ষেত্রে বুক ব্যথার মূল কারণ হতে পারে। হৃদরোগ চিকিৎসায় ওষুধপত্রের সঙ্গে সঙ্গে আপনার জীবনধারা পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়া-দাওয়ার ভূমিকাও অনেক গুরুত্ব বহন করে। অপ্রতুল চিকিৎসার জন্য অল্পপরিশ্রমে আপনার বুকব্যথা হতে পারে, খাওয়ার পর, বিছানায় শুইতে গেলে অথবা নামাজ, অজু, গোসলের মতো ছোট-খাটো কর্মসম্পাদনেও বুকব্যথা দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সুচিকিৎসা আপনাকে বুক ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে। সুচিকিৎসার ফলে এসব রোগীও বুকব্যথা থেকে মুক্ত থেকে অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। আমরা জানি, হৃৎপিণ্ডে প্রয়োজনীয় পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ না হওয়ার জন্য মূলত বুকব্যথা হয়ে থাকে আর রিং পরা বা বাইপাস অপারেশন করার মূল উদ্দেশ্য হলো হৃৎপিণ্ডের রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে অক্সিজেনের ঘাটতি মেটানো। তাই এসব অপারেশনের সফলতা হলো, রোগীর বুকব্যথা প্রশমিত হওয়া। তাই চিকিৎসা গ্রহণের পরও বুকব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা খুবই জরুরি, তা না হলে রোগের তীব্রতা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকবে। হৃদরোগ সম্পূর্ণ আরোগ্য হওয়ার মতো কোনো অসুস্থতা নয় তাই এর চিকিৎসা গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হলো রোগীকে শারীরিক উপসর্গ মুক্ত রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপনে সহায়তা করা, রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি থেকে মুক্তরাখা এবং রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসা। বুকব্যথা হৃদরোগের প্রধান লক্ষণ, এর ফলে অনেক রোগী শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন, অনেকে সামাজিক কর্মকাণ্ড করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন, তাতে রোগীর সুস্থ হওয়ার আরও একটি সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়। কারণ হৃদরোগ চিকিৎসায় ওষুধপত্রের পাশাপাশি সঠিক জীবনধারা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ তা না হলে শুধু মেডিসিনের ওপর নির্ভরতার ফলে রোগী দিন-দিন আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বে। সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ রোগীকে মানসিকভাবে উত্ফুল্ল রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে রোগীর সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং বলা যেতে পারে, চিকিৎসার মাধ্যমে বুকের ব্যথা দূরীভূত করে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে সহায়তা করাই চিকিৎসার প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। না হলে ক্রমশ জটিলতা বৃদ্ধি পেয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি রোগী ও তার আত্মীয়স্বজনদের নেতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠবে। বুকব্যথা খুব তীব্র হলে এবং তার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় ও শরীর অত্যধিক ঘামতে থাকলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া বা কোনো হৃদরোগ হাসপাতালে যাওয়া খুবই জরুরি। কারণ হার্ট অ্যাটাক তাত্ক্ষণিকভাবে মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত।

ডা. এম. শমশের আলী, সি. কনসালট্যান্ট,

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং মুন ডায়াগনস্টিক। ফোন : ০১৯৭১৫৬৫৭৬১

সর্বশেষ খবর