শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

গ্লুকোমার সাতকাহন

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম

গ্লুকোমার সাতকাহন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে সারা বিশ্বের প্রায় ৭০ লাখ লোক গ্লুকোমা রোগে ভুগছেন এবং আগামী ২০২০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখে দাঁড়াবে। সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, শতকরা অন্তত ১০ জন মানুষ এখন সামান্য হলেও এ রোগটির সম্বন্ধে ধারণা রাখেন।

গ্লুকোমা সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা- গ্লুকোমা হলেই চোখ অন্ধ হয়ে যাবে এবং এর কোনো চিকিৎসা নেই। এ ধারণায় কিছু সত্যতা থাকলেও পুরোপুরি সত্য নয়। এটা সত্যি গ্লুকোমা চোখের একটি মারাত্মক অসুখ এবং চিকিৎসার আগ পর্যন্ত যেটুকু দৃষ্টি কমে গেছে সেটা আর ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। তবে যেটুকু দৃষ্টি বিদ্যমান আছে সেটুকু সুচিকিৎসা দিয়ে বাঁচানো যায়। গ্লুকোমার সফল অপারেশন হলে সারা জীবনের জন্য আর ড্রপ বা ট্যাবলেট ব্যবহারের প্রয়োজন নাও হতে পারে। আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চোখের ওষুধ ব্যবহার করলে এবং চোখের চাপ স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখতে পারলে ভালো থাকার সম্ভাবনা ৮০-৯০ শতাংশ। বেশিরভাগ গ্লুকোমা রোগীই চোখের ফোঁটা ওষুধ ব্যবহার করে ভালো থাকেন। তবে কোনো রোগী একটি ওষুধে আবার কেউ কেউ ৩-৪টি গ্লুকোমার ওষুধ ব্যবহার করে চোখের চাপ স্বাভাবিক রাখেন। গ্লুকোমার চিকিৎসার জন্য রয়েছে ফোঁটা ওষুধ, লেজার এবং শল্যচিকিৎসা। বাংলাদেশে বর্তমানে সিলেকটিভ লেজার ট্রাবিকুলোপ্লাস্টি বা এসএলটি লেজারের সাহায্যে অত্যন্ত সফলভাবে প্রাথমিক গ্লুকোমার চিকিৎসা করা হচ্ছে। তবে কারও যদি ওষুধ দিয়ে এবং লেজার চিকিৎসায় চোখের চাপ স্বাভাবিক না থাকে তাহলে গ্লুকোমার শল্যচিকিৎসা করার প্রয়োজন হতে পারে। শল্যচিকিৎসার ঝুঁকি কিছু বেশি হলেও অন্ধত্ববরণ করার চেয়ে অবশ্যই ভালো। এ বিষয়ে একজন চক্ষু ও গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে নেওয়াই কাম্য। গ্লুকোমা রোগীর বছরে অন্তত একবার চোখের যাবতীয় ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা ছাড়াও দৃষ্টির পরিসীমা পরীক্ষা করা উচিত। গ্লুকোমা চিকিৎসার জন্যে Early Diagnosis বা প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চোখের নার্ভের যত বেশি ক্ষতি হওয়ার পর রোগ নির্ণয় হয়, ততই চিকিৎসা জটিল হতে থাকে। এ জন্য চশমার পাওয়ার পরিবর্তন বা অন্য কোনো কারণে যখনই চক্ষু চিকিৎসকের কাছে যাবেন তখনই জেনে নিন আপনার গ্লুকোমা আছে কিনা বা গ্লুকোমা সন্দেহজনক কোনো উপসর্গ আপনার আছে কিনা। কারও যদি চোখের চাপ বেশি থাকে, কিংবা অপটিক ডিস্কের পরিবর্তন থাকে তাহলে গ্লুকোমার বিশেষ পরীক্ষাসমূহ করে নিশ্চিত হওয়া উচিত তার গ্লুকোমা হয়েছে কিনা। এসব রোগী চোখে প্রচুর ব্যথা, দৃষ্টিশক্তি একেবারেই কমে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া এসব উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। এসব রোগীর অতি দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে। ২/১ ঘণ্টা দেরিতে এসব রোগীর চোখের নার্ভ অনেকটাই খারাপ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং কারও ব্যথাযুক্ত লাল চোখ হলে যত দ্রুত সম্ভব একজন চক্ষু চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এ জাতীয় গ্লুকোমা রোগীদের শুধু ওষুধে চোখের চাপ স্বাভাবিক হয় না। এ জন্য ওষুধ দিয়ে চোখের চাপ যতটা সম্ভব কমিয়ে শল্যচিকিৎসা করতে হবে। গ্লুকোমা হলে দুশ্চিন্তা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করালে গ্লুকোমাকে সঙ্গে নিয়েই প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। আপনার দৃষ্টি যতটুকু ভালো আছে এটা দিয়ে বাকি জীবন ভালোভাবেই বসবাস করতে পারবেন। তবে তার জন্য দরকার জীবনের কিছু নিয়ম ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা। তাই এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

লেখক : ফ্যাকো অ্যান্ড গ্লুকোমা সার্জন, এমবিবিএস,

এমসিপিএস, ডিও, এফসিপিএস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর