সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঋতু পরিবর্তনে চাই বাড়তি সচেতনতা

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

ঋতু পরিবর্তনে চাই বাড়তি সচেতনতা

ঋতু পরিবর্তনের সময় সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় সর্দি-কাশি বা কমন কোল্ড। বিশেষ করে শীতের শেষে এবং  গরমের শুরুতে তাপমাত্রা পরিবর্তনের সময় এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। প্রায়ই দেখা যায় দুই-তিন দিন নাক বন্ধ থাকে বা নাক দিয়ে পানি ঝরে। গলাব্যথা করে, শুকনা কাশি থাকে, জ্বরও থাকতে পারে। এগুলো বেশিরভাগই ভাইরাসজনিত এবং আন্টিবায়োটিক ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। তবে শুকনা কাশিটা কয়েক সপ্তাহ ভোগাতে পারে। ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ, এন্টি হিস্টামিন  (প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন) খেতে হবে। আর গরম পানিতে গড়গড়া করতে হবে। গরম গরম চা বা গরম পানিতে আদা, মধু, লেবুর রস, তুলসি পাতার রস ইত্যাদি পান করলে উপকার পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাসের পরপরই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে। এক্ষেত্রে কাশির সঙ্গে সঙ্গে হলুদ বা সবুজ রংয়ের কফ বের হয়, বুক ব্যথা করে এবং জ্বর থাকে। তাই অ্যান্টিবায়োটিকও প্রয়োজন হয়। এ সময় আরেকটি ভাইরাস রোগ যাকে বলে সিজনাল ফ্লু যার লক্ষণ কমন কোল্ডের মতোই। আলাদা কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না, উপরের কমন কোল্ডের মতোই। কমন কোল্ড ছাড়াও শীতের শেষে বা গরমের শুরুতে সাইনাস আর টনসিলের প্রদাহ দেখা দিতে পারে। টনসিলের সমস্যা সাধারণত ছোটদেরই বেশি হয় হঠাৎ শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানীয় বা আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসের কারণ। এ ছাড়া যারা হাঁপানি, ব্রংকাইটিস বা শ্বাসজনিত অন্যান্য রোগে ভোগেন, তাদের রোগের প্রকোপ গরমের শেষে বা শীতের পর বসন্তে বাড়তে পারে। আর যেসব অসুখ হতে পারে তা হলো- চোখ ওঠা কানের সমস্যা ইত্যাদি। এ ছাড়া এই সময়টাতে এমনিতেই পানি খাওয়া হয় কম। তার মধ্যে আবার পিপাসার কারণে রাস্তাঘাটে পানি বা শরবত খাওয়া আর খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়া খাদ্য গ্রহণ করার ফলে প্রায়ই ডায়রিয়া দেখা দেয়। এমনকি এসব গ্রহণ করার কারণে টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, জন্ডিস, সাধারণ আমাশয়, রক্ত আমাশয়ও হতে পারে। আবার তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় হিট স্ট্রোক বা হিট এক্সহসশানের মতো জটিল সমস্যারও প্রকোপ দেখা দিতে পারে। এ সময়ে আরেকটি ভাইরাস রোগ হতে পারে, তা হলো জলবসন্ত। প্রথমে একটু জ্বর-সর্দি, তারপর গায়ে ফোস্কার মতো ছোট ছোট দানা। সঙ্গে থাকে অস্বস্তিকর চুলকানি, ঢোক গিলতে অসুবিধা। গায়ে ব্যথা থাকতে পারে। এটাও কোনো মারাত্মক অসুখ নয়। এছাড়া জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, শরীর চুলকালে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ, ক্যালামিন লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করলেই রোগের প্রকোপ কমে আসবে। আর সংক্রমণ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সতর্কতা : ঠাণ্ডাজনিত রোগ রমেও হতে পারে। কাপড় ঘেমে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে, বয়স্ক ও বাচ্চাদের আরও বেশি হয়। ঘাম হলে মুছে ফেলুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঠাণ্ডা পানি বা খাবার খাওয়া, ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা, ধুলাবালিতে যাওয়া ইত্যাদি পরিহার করলে এসব রোগ থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব। ভাইরাসজনিত অসুখে আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে। সবসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে,

যেখানে-সেখানে দূষিত পানি বা অন্যান্য পানীয় খাওয়া বর্জন করতে হবে। পানি বা অন্য তরল জাতীয় তরল পান করুন। অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি, শুধু যেন হয় বিশুদ্ধ। ঋতু পরিবর্তন চিরন্তন। সময়ের সঙ্গে আসবে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত। প্রকৃতি সেজে উঠবে অপরূপ সাজে। আর এর সঙ্গে একেক সময় একেক রোগ-ব্যাধির প্রকোপ হতে থাকবে। সে অনুযায়ী সবাইকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বাড়াতে হবে সচেতনতা। মনে রাখতে

হবে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।

লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর