শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঝেড়ে ফেলুন বিষণ্নতা

ঝেড়ে ফেলুন বিষণ্নতা

গতকাল ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে দিবসটি। এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিবাদ্য ছিল —‘আসুন বিষণ্নতা নিয়ে কথা বলি।’ মানুষের আবেগ, অনুভূতি, চিন্তা, চেতনা নিয়েই তার মন। মন মানুষের চালিকাশক্তি। মন আমাকে/আপনাকে কর্মক্ষম রাখে, চালিত রাখে, আবেগ-তাড়িত করে, অনুভূতিগুলোকে ডানা মেলতে দেয়, চিন্তাশক্তিকে কাজে পরিণত করে। আর মনটি যদি হয় বিষণ্ন, অবসন্ন, হতাশাগ্রস্ত, বিবর্ণ আর আবেগহীন অথবা মনটি যদি ডুবে থাকে হতাশার চোরাগলিতে, ম্রিয়মাণ থাকে অবসাদে তবে সব কর্মক্ষমতা, চিন্তাশক্তি রহিত হতে বাধ্য। ডিপ্রেশন (বিষণ্নতা) এমনই একটি মনোরোগ। যেখানে বিষণ্নতায় ছেয়ে রাখে মন, কর্মস্পৃহা রহিত হয়/কমে যায়/বাধাগ্রস্ত হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধার পরিবর্তন, অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, কর্মে মনোসংযোগের অভাব, সিদ্ধান্তহীনতা, অস্থিরতা থাকতে পারে। ডিপ্রেশনে ভোগা ব্যক্তি নিজেকে ব্যর্থ ভাবে। তার চিন্তাশক্তি থাকে নেতিবাচক। তিনি তার স্বাভাবিক বর্তমান, অতীত এমনকি ভবিষ্যেকও ব্যর্থ ভাবেন আর আশাহত হন।

ডিপ্রেশন আজ আর কোনো লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়। মনে রাখবেন, আপনিই শুধু ডিপ্রেশনে ভুগছেন এমন নয়। ডিপ্রেশন শুধু ব্যক্তির নয়, পরিবার বা দেশের নয়, এটা বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বের প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ আজ ডিপ্রেশনে ভুগছে। ডিপ্রেশনের কঠিন দিকটি হলো গুরুতর ডিপ্রেশন থেকে আত্মহত্যার প্রবণতার ঝুঁকি অনেকগুণে বেড়ে যায়। মনে রাখতে হবে পৃথিবীর সব মৃত্যুর মধ্যে আত্মহত্যা অন্যতম ১০টির একটি কারণ, কিশোর ও তরুণদের মধ্যে দ্বিতীয়। ডিপ্রেশনের ব্যাপকতা, এর প্রভাব আর সুদূরপ্রসারী ফলাফলের কারণে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘আসুন বিষণ্নতা নিয়ে কথা বলি’। আপনি যদি মনে করেন আপনার মাঝে ডিপ্রেশন আছে তবে ভাববেন আপনার পাশেই আপনার মতো অনেকেই আছেন। হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেবেন না। ডিপ্রেশন নিয়ে কথা বলুন মন খুলে। রইল পরামর্শ—

১। আপনজন/নিকটজন/বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কারও সঙ্গে কথা বলুন। নিজের কষ্টগুলো/অনুভূতিগুলো ভাগ করলে/প্রকাশ করলেও অনেক হালকা লাগবে/ভালো লাগবে। ২। বন্ধু-বান্ধব/নিকট আত্মীয় থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন না, বন্ধন অটুট রাখুন, সামাজিকতা বজায় রাখুন। আপনার উপকারে আসবে। ৩। একটু হাঁটুন, হালকা ব্যায়াম করুন, মন সতেজ হবে, প্রফুল্লতা আসবে।

৪। খাবার, ঘুম রুটিন অনুযায়ী করুন। ৫। নিজের চাওয়াকে একটু কমিয়ে রাখুন। এ সময়ে আপনি একটু কম কাজ করুন, তাতে কি। ৬। মাদকাসক্তি, মদ্যপান ডিপ্রেশনকে আরও খারাপ করে। ৭। আত্মহত্যার প্রবণতা/চিন্তা মাথায় এলে সঙ্গে সঙ্গে কারও সাহায্য নিন। মনে রাখবেন ডিপ্রেশনের চিকিৎসা খুবই সম্ভব এবং তা থেকে পরিত্রাণ লাভ সম্ভব। ৮। নেতিবাচক চিন্তা পরিহার করুন, ইতিবাচক ভাবুন। মনে রাখবেন ইতিবাচক ভাবনা সুন্দর জীবন গড়তে পারে।

৯। চিকিৎসক/ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন, তারা আপনাকে সাহায্য করবেন। মনে রাখবেন, সঠিক চিকিৎসা, কাউন্সিলিং আপনাকে ঠিক সারিয়ে তুলবে।

ডিপ্রেশন নিরাময়যোগ্য এমনকি প্রতিরোধযোগ্য।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক মো. আজিজুল ইসলাম

অধ্যাপক ও উপদেষ্টা, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও সিএমএইচ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর