সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফুসফুসে বাতাস ঢুকলে

ফুসফুসে বাতাস ঢুকলে

একজন মানুষের দুটি ফুসফুস থাকে। আর ফুসফুস ভর্তি থাকে বাতাস দিয়ে, সেই বাতাস আমরা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে নিয়ে থাকি। কিন্তু এমন একটি রোগ রয়েছে যাতে ফুসফুস ভরে যায় বাতাস আর বাতাসে। এত বাতাস যে রোগী বুকের ব্যথায় চিৎকার করে আর এত বাতাস থাকা সত্ত্বেও রোগী শ্বাস পায় না। আসলে বাতাসটি ফুসফুসে জমে না। দুই ফুসফুসের চারদিকে প্লুরা বলে এক ধরনের আবরণী আছে। এই আবরণীর আবার রয়েছে দুটি পর্দা। সাধারণত সুস্থ অবস্থায় পর্দা দুটির মধ্যে কোনো জায়গা থাকে না। বিশেষ কিছু সমস্যা বা রোগের কারণে পর্দা দুটির মধ্যে বাতাস জমা হতে থাকে আর এই বাতাস জমা হওয়াকেই আমরা নিউমোথোরাক্স বলি। নিউমো অর্থ বাতাস আর থোরাক্স অর্থ বক্ষ। আর এই দুই মিলিয়ে হয় বুকের মধ্যে বাতাস। অল্প পরিমাণে বাতাস জমলে খুব একটা শ্বাসকষ্ট হয় না। তবে অল্প অল্প ব্যথা রোগী অনুভব করতে পারে। যত বাতাস জমবে সমস্যা ততই বাড়তে থাকে। সাধারণত ফুসফুসে যক্ষ্মা হলে কিংবা এমফাইসিমা সংক্রান্ত বেলুনের মতো একগুচ্ছ বাতাস জমা হয়ে থাকলে যাকে আমরা বুলা বলে থাকি। সেই বুলা ফেটে গেলে নিউমোথোরাক্স হতে পারে। ফুসফুসে ক্যান্সার হলেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় বুকে আঘাত লাগলেও এটা দেখা দিতে পারে। তবে বাংলাদেশে নিউমোথোরাক্সের একটা উল্লেখযোগ্য কারণ হলো ফুসফুসের যক্ষ্মা। অনেক ক্ষেত্রে আবার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। দেখা গেল একজন সুস্থ লোক হঠাৎ করে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট এবং বুক ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। ঢ-ত্ধু এবং বুক পরীক্ষা করে দেখা গেল, ফুসফুসের পর্দার অভ্যন্তরে বাতাস ঢুকে পড়েছে। এমন কতগুলো লম্বাটে ভগ্নস্বাস্থ্যের রোগী দেখেছি যারা কয়েক মাস পর পরই নিমোথোরাক্সে আক্রান্ত হয়। যারা নিয়মিত ধূমপান করে তাদের ফুসফুসের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে; ফলে তারাও এই সমস্যায় পড়তে পারে। তাই দেরি না করে আজই ধূমপান পরিত্যাগ করুন। যারা অনেক দিন হাঁপানিতে ভুগছেন এমন রোগীর ব্যাপারে আমরা এই জটিলতার চিন্তা অবশ্যই করে থাকি। কারণ হাঁপানি রোগীর নিউমোথোরাক্স হয়ে গেলে চিকিৎসায় বিভ্রাট দেখা দেয়। তাই হাঁপানি সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিউমোথোরাক্সের কতগুলো প্রকারভেদ আছে। যেমন :

১. বন্ধ ধরন : যেটা এমন কোনো ভয়ের কিছু না। কিছু দিন বিশ্রামে থাকলে এবং ওষুধের মাধ্যমেই ভালো হয়ে যায়। খুব বেশি বাতাস জমলে ইন্টাকোস্টাল টিউবের মাধ্যমে বাতাস বের করে নিলেই সব ঠিকঠাক হয়ে যায়।

২. খোলা ধরন : এতে ওষুধ কিংবা টিউব ব্যবহার করলেও ভালো হতে চায় না। এমনকি বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের পর্দার অভ্যন্তরে পানিও জমে যায়। এই খোলা ধরনের নিউমোথোরাক্সে আক্রান্ত হলে এক ধরনের ফিসটুলা হয়, ফলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। তবে এই বন্ধ বা খোলা ধরনের নিউমোথোরাক্সের চেয়ে শত গুণ বিপজ্জনক হলো-টেনশন নিউমোথোরাক্স। এই ধরনের সমস্যা বাতাস ফুসফুসের পর্দায় প্রতিবার শ্বাসের টানে টানে জমতেই থাকে। বাতাস এত চাপে জমতে থাকে যে, রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, প্রচণ্ড ব্যথা হতে থাকে। রোগী আস্তে আস্তে নীলবর্ণ ধারণ করতে থাকে এবং প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে মৃত্যুবরণ করে। এ ধরনের সমস্যা খুব একটা দুর্লভ ঘটনা নয়। বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই এ ধরনের রোগী পেয়ে থাকেন। এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের তাত্ক্ষণিক হাসপাতালে ভর্তি করে বুকের ভিতর এক ধরনের নির্দিষ্ট সুই দিয়ে বাতাস বের করে ফেললেই রোগী তাত্ক্ষণিক সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে সুই ফোটানোর আগে একজন চিকিৎসককে তার অভিজ্ঞতা ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে হয়। কারণ হার্ট অ্যাটাকে অনেক সময় এ সমস্যার মতো বলে ভুল হতে পারে। দ্রুত X-ray এবং ইসিজি করার ব্যবস্থা থাকলে সত্যিকার সমস্যা শনাক্ত করা সম্ভব।

অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ

অ্যাজমা ও বক্ষ্যব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইউনাইটেড

হাসপাতাল। ফোন : ০১৭৪৫৯১৯৬৬৪।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর