রবিবার, ৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

তেল-চর্বির ভালোমন্দ

তেল-চর্বির ভালোমন্দ

তেল বা চর্বি বলতে এমন এক ধরনের জৈব রাসায়নিক বস্তুকে বুঝানো হয় যার উপাদান হিসেবে ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান থাকে। তেল বা চর্বিকে সহজভাবে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। সেচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি যা জীবজন্তুর দেহ থেকে পাওয়া যায় এবং সহজ ভাষায় তাকে চর্বি বলা হয় যেমন মাছ ও মাংসে বিদ্যমান চর্বি। আনসেচুরেটেড ফ্যাট বা অসম্পৃক্ত চর্বি যা উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়, যাকে সাধারণভাবে আমরা তেল বলে অভিহিত করে থাকি, যেমন সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, কর্নঅয়েল, তিলের তেল, তিসির তেল, ক্যানোলা অয়েল, জলপাই তেল বা অলিভঅয়েল ইত্যাদি। সম্পৃক্ত চর্বি ও অসম্পৃক্ত চর্বি বা চর্বি ও তেল খুব সহজেই আলাদা করা যায়। সম্পৃক্ত চর্বি বা চর্বি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কঠিন (Solid) বস্তু হিসেবে থাকে এবং অসম্পৃক্ত চর্বি বা তেল স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তরল (Liquid) বস্তু হিসেবে বিদ্যমান থাকে। তেল চর্বি অত্যধিক শক্তিদায়ক খাদ্যবস্তু। এক কেজি চাল অথবা এক কেজি মাছ-মাংস থেকে যে পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায় এক কেজি তেল-চর্বি থেকে তার চেয়ে দ্বিগুণ শক্তি পাওয়া যায়। সুতরাং তেল-চর্বি অত্যধিক শক্তিদায়ক খাদ্যবস্তু। খাদ্য তৈরিতে তেল-চর্বি ব্যবহারের ফলে খাদ্যবস্তু দৃষ্টিনন্দন ও সুস্বাদু হয় এবং খাদ্যে সুগন্ধ আনয়ন করে ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে। তেল-চর্বি জাতীয় খাদ্য অনেক ধরনের ভিটামিনের উৎস, যেমন ভিটামিন A, D, E, K ইত্যাদি। তেল-চর্বি প্রয়োজনীয় মাত্রায় গ্রহণ না করলে এসব ভিটামিনের ঘাটতি ঘটে, ফলে স্বাস্থ্যহানি হয়ে থাকে। তেল-চর্বিতে কিছু অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিডও বিদ্যমান থাকে যা খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক, কারণ আমাদের শরীর ওইসব ফ্যাটি এসিড তৈরি করতে পারে না এবং এসব ফ্যাটি এসিডের অভাবে মানুষ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে। তেল-চর্বিতে কোলেস্টেরল নামক এক ধরনের সুপার চর্বিজাতীয় পদার্থ বিদ্যমান থাকে। কোলেস্টেরল অল্প পরিমাণে দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয়, তবে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে হূদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন আমাদের খাদ্যে গড়পড়তায় ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম তেল-চর্বি থাকা স্বাস্থ্যসম্মত, তবে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম তেল-চর্বি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে, তা না হলে আপনি অপুষ্টিতে ভুগবেন। কোনোভাবে দৈনিক ১০০ গ্রামের অধিক তেল-চর্বি গ্রহণ করা উচিত নয়। জীবজন্তু থেকে প্রাপ্ত খাদ্যে অনেক আকার-প্রকারে চর্বি বিদ্যমান থাকে যেমন- ডিমের কুসুম, দুধের সর, ঘি, মাখন, বাটার, কলিজা, মগজ, ভুঁড়ি, তৈলাক্ত মাছ, মাছের ডিম ও মাথা এবং মাছ ও মাংসের পরতে পরতে অনেক চর্বি বিদ্যমান থাকে, আরও থাকে হাঁস-মুরগির চামড়ায় এবং সর্বোপরি জীবজন্তুর দেহে দৃশ্যমান আলাদা চর্বি। প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাত্রায় তেল-চর্বি গ্রহণের ফলে মানবদেহে চর্বি জমা হতে হতে মানুষের ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকে, মেদভুঁড়ি দেখা দেয়, ডায়াবেটিস ও হূদরোগের ঝুঁকি অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়, যার ফলে কায়িক শ্রম সম্পাদনের যোগ্যতা কমে যায়। কায়িক শ্রম না করার ফলে ব্যক্তি আরও বেশি মোটাসোটা হতে থাকে ফলশ্রুতিতে মানুষ এক ধরনের দুষ্টচক্রে পড়ে আরও বেশি মোটা ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পতিত হয়। বাড়ন্ত বয়সের ছেলেমেয়ে, শ্রমিক শ্রেণির ব্যক্তি যেমন- দিনমজুর, কুলি, রিকশা-ঠেলাগাড়ি-ভ্যান চালক, কৃষক-শ্রমিক ইত্যাদি পেশার লোকজন বেশি পরিমাণে তেল-চর্বিজাতীয় খাদ্যবস্তু গ্রহণ করতে পারবেন। যদি কেউ শারীরিক ওজন বৃদ্ধি করতে চান যেমন বড় ধরনের অসুস্থতার কারণে স্বাস্থ্যহানি ঘটেছে বা খুব হালকা-পাতলা ব্যক্তি, তারা স্বাস্থ্যবান হওয়ার জন্য অধিক পরিমাণে তেল-চর্বিজাতীয় খাদ্যবস্তু যেমন- পোলাও, মাখন, ঘি, মোগলাই, হালিম, জর্দা, ইত্যাদি গ্রহণ করতে পারবেন। যারা শারীরিক ওজন বৃদ্ধিজনিত সমস্যায়, যারা উচ্চ রক্তচাপে ও হূদরোগে ভুগছেন, তারা তেল-চর্বিজাতীয় খাবার সর্বনিম্ন মাত্রায় গ্রহণ করবেন।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল,

কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর