মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

চিকুনগুনিয়া নিয়ে আতঙ্ক নয়

চিকুনগুনিয়া নিয়ে আতঙ্ক নয়

‘চিকুনগুনিয়া’ একটি আফ্রিকান শব্দ যার অর্থ ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যাওয়া। বর্তমানে চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ১৯৫৫ সালে ‘মেরিয়ন রবিনসন’ নামে একজন চিকিৎসক সর্বপ্রথম এ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন। ১৯৫২ সালে আফ্রিকার মেকন্দ, মোজাম্বিক ও তানজানিয়া এলাকায় এ রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। চিকুনগুনিয়া একটি মেকন্দ শব্দ। আফ্রিকায় এ রোগ আবিষ্কৃত হওয়ার পর দেখা গেল যে, এ রোগের আবির্ভাব শুধু আফ্রিকায় নয়, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হয়। বর্তমানে ইউরোপে বিশেষ করে ইতালিতে এ রোগের বিস্তৃতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। চিকুনগুনিয়া এক ধরনের ভাইরাস সংক্রমিত রোগ। এডিস মশা কামড়ের মাধ্যমে মানবদেহে এ রোগ ছড়িয়ে থাকে। চিকুনগুনিয়া অসুখের জন্য যে ভাইরাস দায়ী তা এক ধরনের আরবো ভাইরাস যা টোগা ভাইরাস পরিবারের আলফা ভাইরাস সদস্য। এটি মানবদেহ থেকে মশা এবং মশা থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে থাকে। উক্ত ভাইরাস রক্তের লোহিত কণিকা যেমন ফাইব্রোব্লাস্ট মেকরোফেজ নামক রক্ত কণিকাকে আক্রান্ত করে থাকে।

উপসর্গ : প্রাথমিক অবস্থায় রোগী জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এটি মধ্যম মাত্রার জ্বর যা দুই থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। জ্বরের পরে রোগীর শরীরের বিভিন্ন গিটে ব্যথায় আক্রান্ত হয় এবং সারা শরীরে র‍্যাশ (লাল দাগ ও ফুলা) দেখা দেয়। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব, শরীর ব্যথা ও প্রচণ্ড দুর্বলতা অনুভূত হয়। গিটের ব্যথা সাধারণত হাত এবং পায়ের গিটকে আক্রান্ত করে থাকে। এ ধরনের গিটের ব্যথা সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে এ ব্যথা কয়েক বছর ধরে থাকতে পারে। সাধারণত মশার কামরে দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে।

রোগ শনাক্তকরণ: রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাস শনাক্তকরণ এবং রক্তের অন্যান্য কিছু পরিবতর্ন শনাক্তকরণের মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে। যেমন CBC, PCR, IgG, IgM ‰es ELISA চিকিৎসা : ১। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ বেশ কার্যকর। ২। গিটে ব্যথার জন্য সচরাচর ব্যবহূত ব্যথা নিরাময়ের ওষুধ কার্যকর নয়। ব্যথা নিরাময়ের জন্য ক্লোরোকুইন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যেতে পারে।

৩। জ্বরের সময় রোগীকে প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার দেওয়া যেতে পারে। ৪। অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের ভূমিকা খুবই নগণ্য। তবে জটিলতা প্রতিরোধের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রতিরোধ : যেহেতু চিকুনগুনিয়া মশাবাহিত রোগ, তাই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে মশারি ব্যবহার, মশা নিরোধক স্প্রে, কয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য ইন্টারফেরন যুক্ত সিরাম ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যায়। উন্নত বিশ্বে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের জন্য বানরের সিরাম ব্যবহার করা হয়। ডি. এন. এ ভ্যাকসিন আবিষ্কার এখনো পরীক্ষাগার পর্যায়ে আছে। আশা করা যাচ্ছে অতিসত্বর চিকিৎসা কাজে ব্যবহারের জন্য এই ধরনের ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল,

কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার এবং মুন

ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর