রবিবার, ২ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

মুখে ঘা : রোগের উপসর্গ

অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরী

মুখে ঘা : রোগের উপসর্গ

চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ২০০ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ মুখ গহ্বরে দৃষ্টিগোচর হয়। বর্তমানে মরণঘাতী এইডস থেকে শুরু করে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এমনকি গর্ভাবস্থায়ও অনেক লক্ষণ মুখের ভিতর প্রকাশ পায়। যেমন একটি রোগীর মুখ পরীক্ষা করে যদি দেখা যায়, তার মাড়িতে তীব্র প্রদাহ রয়েছে, মাড়ি ফুলেছে, তাতে পুঁজ জমা হয়েছে, মাড়ি থেকে দাঁত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং সামান্য আঘাতে রক্ত বের হয়ে আসছে তবেই তাকে আমরা পেরিওডেন্টাল ডিজিজ বা মাড়ির রোগ হিসেবে বলতে পারি। অনেক ক্ষেত্রে এ সমস্ত রোগীর ইতিহাস নিয়ে দেখা যায়, কয়েক বৎসর যাবৎ তাদের ডায়াবেটিস এবং তারা নিয়মিতভাবে ইনসুলিন নেন। ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন থেকে একটি সুন্দর বই দেওয়া হয়, তাতে তার একটা মোটামুটি ইতিহাস পাওয়া যায়। যেমন— রক্তচাপ, অন্যান্য রোগের উপস্থিতি, খাদ্যাভাস সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় উপদেশ এবং নিয়মিতভাবে তার রক্তের শর্করা পরীক্ষার ফলাফল। দেখা যায় প্রতিমাসেই তার শর্করা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং প্রায়ই রক্তের শর্করা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। জেনে রাখা প্রয়োজন, রক্তের শর্করার স্বাভাবিক পরিমাণ হচ্ছে— অভুক্ত অবস্থায় ৬.৪ মি. মোল এবং খাবার দু’ঘণ্টা পর ৭.৮ মি. মোলের কম। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, যে সমস্ত ডায়াবেটিস রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেন না তাদেরই মাড়ির রোগের প্রদাহ বা পেরিওডেন্টাল ডিজিজ বেশি হয়। তবে এর অর্থ এই নয় যে, যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদেরই এই রোগ বেশি হবে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যাদের মুখে ডেন্টাল প্লাক রয়েছে এবং জিনজিভাইটিস রয়েছে তাদের ডায়াবেটিসের কারণে মুখ ও মাড়ির রোগ আরও বেড়ে যায় এবং প্রদাহ আরও তীব্রতর আকার ধারণ করে পরবর্তীতে দাঁতগুলো পড়ে যায় এবং ফেলে দিতে হয়। এ ছাড়া আরও একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে মাড়ির প্রদাহের কারণেই ডায়াবেটিস রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না এবং রক্তের শর্করাও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে পারে। সুতরাং ভালোভাবে খাদ্যদ্রব্য চিবিয়ে খাওয়ার জন্য যেমন সুস্থ মাড়ি ও দাঁতের প্রয়োজন তেমনি ডায়াবেটিস রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও মাড়িকে প্রদাহমুক্ত বা সুস্থ রাখা প্রয়োজন। মুখের আরও এটি বিশেষ রোগ মুখের ঘা। এই ঘা নানা কারণে হতে পারে। যাদের বিভিন্ন রোগ রয়েছে যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, রক্তস্বল্পতা, ক্যান্সার, এইডস ইত্যাদি। বিশ্বের প্রথম যে এইডস রোগীকে শনাক্ত করা হয়, তার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরা পড়ে মুখের ঘা, যাকে বলা হয় হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া। যাদের ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ রয়েছে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং দীর্ঘদিন যাবৎ ওষুধ গ্রহণ করছেন তাদের মুখে এক ধরনের জীবাণু বিস্তার লাভ করতে পারে। যেমন, তাদের মুখে ক্যানডিডা জীবাণুর কারণে ক্যানডিডিয়াসিস হতে পারে। মুখে আরও একটি ঘা সব বয়সেই হতে পারে এর নাম ‘এপথাস আলসার’। বিশেষ কোনো (বি) ভিটামিন স্বল্পতা, মুখের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা ইত্যাদির কারণে এপথাস আলসার বেশি হয়।

লেখক : অনারারি সিনিয়র কনসালটেন্ট, ডেন্টাল বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা। এবং মুকুল ডেন্টাল ক্লিনিক, ১৫/এ, গ্রিন রোড, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর