শনিবার, ২২ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

শিশুর পায়ে ব্যথা হলেই বাতজ্বর নয়

শিশুর পায়ে ব্যথা হলেই বাতজ্বর নয়

রোহানের (ছদ্মনাম) বয়স ৯ বছর। প্রায়ই পা ব্যথা করে। বিশেষ করে পায়ের মাংসপেশিতে বেশি ব্যথা করে যেদিন বেশি হাঁটাহাঁটি হয়। এটি প্রথম দেখা দেয় তিন বছর আগে। তার কিছু কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এএসও টাইটার বেশি পাওয়ায় বাতজ্বর হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাই প্রতিমাসে মাংসে পেনিসিলিন ইনজেকশন দেওয়া হতো। তারপরও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তাহলে প্রশ্ন আসে এত ইনজেকশন নিচ্ছে তারপরও কেন এই ব্যথা? রোহানের মতো অনেক ছেলেমেয়ে এরকম পায়ে, হাতে ব্যথার জন্য কিছু পরীক্ষা করায়। কেউ কেউ  টাইটার বেশি পেলে বাতজ্বর আখ্যা দিয়ে বছরের পর বছর পেনিসিলিন ট্যাবলেট কিংবা ইনজেকশন দিতে থাকেন। পরে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলে অনেকের বাতজ্বর ভুল প্রমাণিত হয়। তাই বুঝতে হবে বাতজ্বর কী?

বাতজ্বর : ইংরেজিতে বলে রিউমেটিক ফিভার। বাচ্চাদের একটি প্রদাহজনিত রোগ। গলায় স্ট্রেপটোকক্কাস নামের অণুজীবের সংক্রমণের পর তার বিরুদ্ধে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, পিঠ ইত্যাদির টিস্যুকে আক্রমণ করে প্রদাহজনিত রোগের সৃষ্টি করে।

বাতজ্বরের ঝুঁকিপূর্ণ কারা : এটা সাধারণত পাঁচ থেকে ১৫ বছর বয়সের বাচ্চাদের বেশি হয়। স্কুলের ছাত্রছাত্রী দলবদ্ধ হয়ে থাকা, কিংবা ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় বসবাস করলে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে স্ট্রেপটোকক্কাস দিয়ে গলা ব্যথা জাতীয় রোগ হওয়ার ৭-৯ দিনের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা শুরু করলে বাতজ্বর হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

লক্ষণ: এই বাতজ্বর মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, পিঠ, চামড়া ইত্যাদি স্থানকে আক্রমণ করে। তাই কোনো একক লক্ষণ কিংবা পরীক্ষা দিয়ে ডাক্তাররা এটা নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করতে পারেন না। তাই অনেক গবেষণার পর একজন বিজ্ঞানী এটা নির্ণয়ের যে বৈশিষ্ট্য ঠিক করে দিয়েছেন তার অনুসারে সেটা জোনস নির্ণায়ক এবং কিছু পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে পরিবর্তিত জোনস মানদণ্ড নামে চিকিৎসকদের জন্য অবশ্য অনুকরণীয় হয়ে আছে। এই বৈশিষ্ট্যের মধ্যে তিনি পাঁচটি মুখ্য এবং কিছু গৌণ বৈশিষ্ট্য রেখেছেন। সেই সঙ্গে থাকতে হবে স্ট্রেপটোকক্কাস সংক্রমণের প্রমাণ। মুখ্য বৈশিষ্ট্যের যে কোনো দুটি অথবা একটি মুখ্যর সঙ্গে দুটি গৌণ বৈশিষ্ট্য এবং সম্প্রতি স্ট্রেপটোকক্কাস সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে বাতজ্বর হিসেবে ধরতে হবে অন্যথায় নয়।

মুখ্য বৈশিষ্ট্য : ১. হৃৎপিণ্ডের প্রদাহ, ২. হাত ও পায়ের বিভিন্ন জয়েন্টে প্রদাহ, ৩. মস্তিষ্কে প্রদাহজনিত কাঁপুনি খিঁচুনি, ৪. চামড়ার লাল দাগ, ৫. চামড়ার নিচে আর গৌণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে থাকতে পারে হাত-পায়ে হালকা ব্যথা, জ্বর বেড়ে যাওয়া এবং দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়া। তবে এদের সঙ্গে সম্প্রতি সংক্রমণের প্রমাণ হিসেবে গলা পরীক্ষায় জীবাণুর অস্তিত্ব, বাড়তি টাইটার থাকতে হবে।

ডো. এম. ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর