শিরোনাম
সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যগত প্রস্তুতি

হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যগত প্রস্তুতি

মুসলমানদের মধ্যে যাদের আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্য রয়েছে তাদের ওপর হজ পালন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ইসলাম ধর্মে। হজ পালনের ব্যাপারে মুসলমানদের আগ্রহ অপরিসীম। প্রতিবছর প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ মুসলমান হজব্রত পালন করে থাকেন। হজব্রত পালনকালে হাজিদের স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এত বিপুলসংখ্যক মানুষের ভিড়, হজব্রত পালনের জন্য শারীরিক পরিশ্রম এবং সৌদি আরবের পরিবেশগত ভিন্নতা ইত্যাদি মিলিয়ে হাজিরা নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন।

প্রয়োজনীয় কিছু সতর্কতামূলক সাধারণ ব্যবস্থা হলো—

১. হজ পালনের অদম্য আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হজের উদ্দেশে যাত্রা করার প্রাক্কালে একজন হাজির কাছে কোনো কিছুকেই আর বাধা মনে হয় না। এ মানসিকতার বশবর্তী হয়ে অনেকে অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে পড়েন। যার ফলে দেখা যায় হজযাত্রার আগেই হজক্যাম্পে তিনি পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এটা কখনো কাম্য নয়। হজের শুরুতেই তাই শক্তি সঞ্চয়ের জন্য ধীরস্থির থাকতে হবে। অহেতুক ছোটাছুটি এখানে কাম্য নয়।

২. হজের সময় রোদ এড়াতে কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা যেতে পারে। দরকার হলে মাথায় সাদা ছাতা ব্যবহার করতে হবে। গরমজনিত ঝুঁকি এড়াতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। রাতে ভ্রমণ করতে হবে। কিছুটা লবণাক্ত খাবার এ সময়ে দরকার হয়, ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া লবণের ঘাটতি মেটানোর জন্য।

৩. শরীরের পানি স্বল্পতা এড়াতে সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি রাখতে হবে। অতিরিক্ত ঘামের কারণে সৃষ্ট শারীরিক অবসাদ কাটাতে খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। এ খাবার স্যালাইন ডায়রিয়া হলেও উপকারে আসে। কাজেই সঙ্গে নিতে পারেন খাবার স্যালাইনও।

৪. বেশিরভাগ হাজিই গলাব্যথা, কাশি, ঘন ঘন হাঁচি, সর্দি এবং জ্বরে ভুগে থাকেন। হঠাৎ পরিবেশ পরিবর্তনের জন্য এমনটি হয়ে থাকে। এসব সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সাধারণ কিছু ওষুধপত্র যেমন- ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, হাঁচি-সর্দির জন্য ফেক্সোফেনাডিন জাতীয় ওষুধ, কাশির জন্য এডোভাস সিরাপ কিংবা সিনেকড ট্যাবলেট গ্রহণ করা যেতে পারে।

৫. এ ছাড়া হজ পালনের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর থেকে মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করা উচিত। কারণ হজের দিনগুলোতে সুষম খাবারের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সেই ঘাটতি পূরণে মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করা উচিত। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে নেওয়া শ্রেয়।

৬. যদি কারও অ্যাজমা হাঁপানি থাকে তখন অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে হজব্রত পালনের পথে কীভাবে চলতে হবে সে বিষয়ে সম্যক ধারণা ও প্রস্তুতি থাকতে হবে। কারণ হজ পালনের সময় বেশ কিছু ধূলিময় স্থান অতিক্রম করতে হতে পারে। তাই সঙ্গে রাখতে হবে হাঁপানির প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো।

৭. মসজিদে বা অন্য কোথাও চলাফেরার সময় কড়া সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিত হবে না। কারণ অতিরিক্ত বা কড়া সুগন্ধি হাঁপানি এবং মাথাব্যথা মাইগ্রেনের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয় বলে মনে করা হয়।

৮. হজব্রত পালনের সময় হাজিদের অনেক হাঁটতে হয়। কাজেই দেশে থাকতেই হাঁটার প্রস্তুতি নিতে হবে। হাঁটা খুব ভালো ব্যায়াম। হজের জন্য রওনা হওয়ার ছয় থেকে আট সপ্তাহ আগে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে হঠাৎ অতিরিক্ত হাঁটার কারণে পায়ের মাংসপেশিতে খিল ধরতে পারে কিংবা মাংসপেশি কিছুটা ব্যথা হতে পারে।

৯. যারা চশমা ব্যবহার করেন, অতিরিক্ত একজোড়া বাড়তি চশমা তাদের সঙ্গে নেওয়া উচিত। আর এই চশমার লেন্স এবং ফ্রেম প্লাস্টিক জাতীয় উপাদানে তৈরি হলে ভালো। কারণ তাতে চশমা সহজে ভাঙবে না।

১০. বায়ু ত্যাগে অজু নষ্ট হয়। হজের সময় বারবার অজু করা খুবই ঝামেলার ব্যাপার। বাতাস ত্যাগ কমাতে বা এড়াতে পেটে বাড়তি বাতাসের উদ্রেককারী খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এন্টাসিড জাতীয় ওষুধেই এ সমস্যা দূর হয়ে যায়।

ডা. সজল আশফাক, সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর