শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

শরীর ফুলে পানি আসা

শরীর ফুলে  পানি আসা

শরীর ফুলে যাওয়া সবসময়ই একটি মারাত্মক উপসর্গ, সেটা যে কারণেই হোক না কেন। শরীর ফুলে যাওয়ার প্রধান কারণ শরীরে অত্যধিক পানি জমা হওয়াকেই বোঝায়। অনেক ধরনের অসুস্থতায় শরীরে পানি জমা হয়ে থাকে তন্মধ্যে হার্ট-ফেইলুর, গর্ভাবস্থা, কিডনি ফেইলুর, রক্তশূন্যতা, লিভারের সমস্যা, বাত জাতীয় অসুস্থতা, অ্যালার্জি, থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিশেষ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বর্তমান সময়ে বিবেচনায় আনতে হবে যেমন- জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপ প্রশমনের ওষুধ, স্টেরয়েড হরমোন, বাতব্যথা নিরাময়ের ওষুধ ইত্যাদি। এদের মধ্যে গর্ভাবস্থা, রক্তশূন্যতা এবং থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা হার্ট ফেইলুর সৃষ্টি করে থাকে। তাই হার্ট ফেইলুরকে শরীর ফুলে যাওয়ার একটি প্রধান ও অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়।

শরীরে পানি জমা হলে তার সঙ্গে পরিমিত মাত্রায় দ্রবণীয় লবণও শরীরে জমা হতে থাকে। এ ধরনের লবণ পানির দ্রবণ শরীরের প্রতিটি অঙ্গে, প্রতিটি কলায় এবং শরীরের বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় জমা হয়ে শরীরের ওজন বৃদ্ধি ঘটাতে থাকে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পানি দ্বারা সৃষ্ট চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই এ ক্ষেত্রে প্রতিটি অঙ্গের কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হয়। ফুসফুসে পানি জমা হওয়ার জন্য ঘনঘন কাশির উদ্বেগ হয়, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। পেটে পানি জমা হওয়ার জন্য পেটে সবসময় ভরাভরা ভাব পরিলক্ষিত হয়, খাদ্য গ্রহণে আগ্রহ কমে যায়, হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে, বদহজম দেখা দেয়। লিভারে পানি জমে লিভার আকারে বড় হয়ে যাওয়ায় পেটের উপরিভাগে চাকা ও ব্যথা অনুভূত হয়ে ক্ষেত্রবিশেষে জন্ডিসের উৎপত্তি ঘটে থাকে। মাংসপেশিতে পানি জমে মাংসপেশি দুর্বল হওয়া, অলসতা, কাজকর্মে অনীহা, কর্মদক্ষতা কমে যাওয়া, কাজ করতে গেলে সহজে হাঁপিয়ে ওঠার মতো উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়। অস্থিসন্ধিতে পানি জমা হওয়ায় বিভিন্ন জয়েন্টে ফুলা ও ব্যথা অনুভূত হয় এবং ওঠা-বসায়, নামাজ পড়ায় অপারগতা দেখা দিতে পারে। হাত-পায়ে অত্যধিক পানি জমার জন্য চামড়া চকচকে হয়ে তাতে ফাটল দেখা দেয় এবং তা থেকে পানি নির্গত হতে দেখা যায়। অত্যধিক পানি জমা হওয়ার জন্য বিভিন্ন অঙ্গে অতি সহজেই বিভিন্ন ধরনের জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়ে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। খুব সহজে রোগী ঠাণ্ডা সর্দি-কাশি, ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়ার মতো জটিল অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। আঘাতজনিত ক্ষত সহজে সারতে চায় না এবং প্রায় ক্ষেত্রেই তা আরও বেশি মারাত্মক অবস্থা, যেমন- গেংগ্রিন বা পচন ধরে যেতে পারে। হৃৎপিণ্ড পাম্পের মাধ্যমে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে থাকে। রক্তপ্রবাহ সঠিক থাকাই প্রতিটি অঙ্গের সুষ্ঠু কর্ম সম্পাদনের পূর্বশর্ত। কোনো কারণে যদি হৃৎপিণ্ড কমজুরি হয়ে যায় তখন সে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব মানে রক্ত পাম্প করতে ব্যর্থ হয়। এ অবস্থাকে ডাক্তারি পরিভাষায় হার্ট ফেইলুর বলা হয়। হার্ট ফেইলুরের ফলে শরীরে রক্ত প্রবাহের স্থবিরতার সৃষ্টি হয়, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পানি জমা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। রক্ত প্রবাহের স্বল্পতার জন্য প্রতিটি অঙ্গে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ তার কার্যকারিতা হারাতে থাকে। মানুষ ভীষণভাবে দুর্বলতা অনুভব করতে থাকে। মেজাজ খিটেখিটে হয়ে যাওয়া ও অমনোযোগিতার কারণ হিসেবে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের ঘাটতিকে দায়ী করা হয়। স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা, শারীরিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া ও ক্ষেত্রবিশেষে অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। 

তাই এ বিষয়ে আমাদের অবহেলা করা ঠিক নয়।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শমশের হার্ট কেয়ার এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাবর রোড, শ্যামলী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর