সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বক্ষব্যাধি যখন পেশাগত কারণে

অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোস্তফা হোসেন

বক্ষব্যাধি যখন পেশাগত কারণে

 মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য নানা ধরনের পেশায় নিয়োজিত থাকে। কেউবা উন্নত, ভালো এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করেন, কেউবা অনুন্নত ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করেন। যারা অস্বাস্থ্যকর এবং অনুন্নত পরিবেশে কাজ করেন তাদের নানারকম শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিবিধ পেশা এবং পেশার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ফলে সৃষ্ট শারীরিক সমস্যার মধ্যে বক্ষব্যাধিতে  আক্রান্ত হচ্ছে এমন রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। বিভিন্ন পেশা রয়েছে যার কারণে মানুষ বুকের নানাবিধ রোগবালাইতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন পেশার কারণে সৃষ্ট বক্ষব্যাধিসমূহ—  ১. কিছু কিছু মিল-কলকারখানার অভ্যন্তরে স্যাঁতসেঁতে, বদ্ধ ও নোংরা পরিবেশ যক্ষ্মার জীবাণু বেড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ দেখতে পাওয়া যায়। তাই এসব পরিবেশে যারা কাজ করেন তাদের যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি। ২. নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ-ক্রমিয়াম ক্যাডমিয়াম, এসবেস্টস ইত্যাদির সংস্পর্শে দীর্ঘদিন যারা কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা থাকে বেশি। ৩. এমন অনেক কর্মস্থল আছে সেসব জায়গায় প্রচুর ধূলিকণা, গ্যাস কিউম এবং ঝাঁজাল পদার্থ বিদ্যমান থাকে। এসব বস্তু মানুষের শ্বাসের সঙ্গে নাকে ঢুকে ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে। ৪. তুলার তন্তু ও ফুসফুসে প্রবেশ করে বক্ষের রোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। ৫. নিউমোকোনি ওসিস নামক এক ধরনের বুকের অসুখ রয়েছে। যেসব লোক কয়লার খনিতে কাজ করেন তাদের দেহে এ ব্যাধির উপক্রম দেখা দিতে পারে। ৬. পাখি বিক্রির কাজ যারা করেন, দীর্ঘদিন অনেক পাখির সংস্পর্শে থাকতে থাকতে তাদের বার্ড ফেনসিয়ার্স লাঙ্গ নামক বক্ষব্যাধি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ৭. ভেজা ধান থেকে যে বুকের অসুখ হয়ে থাকে তার কারণে মানুষের শরীরে কাশি ও শ্বাসকষ্টের উপক্রম হয়। আর যারা শস্য কাটার কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের বুকের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। তাই যেসব পেশার কারণে বক্ষব্যাধি হওয়ার ঝুঁকি থাকে সেসব পেশার লোকদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পেশাগত কোনো কারণে বক্ষব্যাধির উপসর্গসমূহ পরিলক্ষিত হলে দ্রুত বক্ষব্যাধি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মিল-কলকারখানা প্রতিষ্ঠার সময় কর্তৃপক্ষকে শ্রমিক-কর্মীদের স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কারখানার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ যাতে নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

যেসব বিষয় এড়িয়ে চললে কর্মীদের বুকের রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে

সেসব বিষয় শ্রমিকদের জানাতে হবে। তাই এসব

বিষয়ে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।

লেখক : অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ

মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।

 

সর্বশেষ খবর