সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রবীণদের কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা

প্রবীণদের কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা

যাদের বয়স ৬০ বছর পেরিয়েছে তাদের আমরা প্রবীণ ব্যক্তি বলে বিবেচনা করে থাকি। মানুষের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা দিন দিন কমতে থাকে, যার ফলে প্রবীণ ব্যক্তিদের বেলায় বেশ কিছু অসুস্থতা প্রায় সবার মধ্যে দেখা দিয়ে থাকে। যেমন উচ্চরক্তচাপ, হার্টের ব্লক বা হার্টের রক্ত সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বলা হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস, কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামক অসুস্থতা, অস্থিসন্ধির সমস্যা বা ক্ষয়জনিত বাতরোগ, হাড়ের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে গিয়ে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, চোখে ছানি পড়া, হাঁটতে-চলতে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়া বা মাথা ঘোরা, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদিই প্রধান অসুস্থতা। এসব অসুস্থতার মধ্যে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও তত্জনিত হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিসজনিত হৃদরোগ দ্রুত প্রাণঘাতি অসুস্থতা বলে বিবেচিত হওয়ায় তাদের গুরুত্ব অন্যান্য অসুস্থতার চেয়ে অনেক বেশি। তাই এসব অসুস্থতা প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসার গুরুত্ব অনেক বেশি। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস কি কারণে হয়ে থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞান এসবের একক কারণ নির্ণয় করতে পারেনি; তাই এদের মাল্টিফেকটরিয়াল ডিজিজ বলা হয়ে থাকে। তার মধ্যে আছে বংশগত প্রবণতা, সামাজিক কারণ, জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস, আচার-আচরণগত কারণ, মানসিক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা ও ব্যক্তির মনমানসিকতা। এ ধরনের অসুস্থতা প্রতিকারের জন্য বেশ কিছু উপায় চিকিৎসা বিজ্ঞানে বর্ণিত আছে। যেমন-জীবনের সব পর্যায়ে শারীরিকভাবে সচল থাকা মানে বয়সভেদে নিরাপদ মাত্রায় কায়িকশ্রম সম্পাদন করা, যা ৮০-৯০ বছর বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্যও প্রযোজ্য। তার মানে জীবনের সব পর্যায়ে আপনি আপনার শারীরিক যোগ্যতা বজায় রাখুন। এ ক্ষেত্রে আপনি আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।

খাদ্যে চর্বি বা তেলের মাত্রা সর্বনিম্ন মাত্রায় নিয়ে আসুন। পরিমাণমত প্রোটিন গ্রহণ করুন। যেমন-ডাল, চর্বি ছাড়া মাংস, মাছ, সপ্তাহে ২টা ডিম, সপ্তাহে কমপক্ষে এক লিটার পরিমাণ দুধ, প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি, ফলমূল ও পানি। বাজারের তৈরি খাবার বর্জন করুন। চেষ্টা করুন সব সময় ঘরের তৈরি খাবার খেতে। খাবারে ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে শর্করা জাতীয় খাদ্য যেমন-ভাত, রুটি, আলু, চিনি ও মিষ্টি গ্রহণের মাত্রা সীমিত রাখতে হবে। লবণ গ্রহণের মাত্রা কমাতে হবে, তাতে উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধ করা যাবে। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় আয়ত্ত করুন। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ উভয় অসুস্থতার শেষ পরিণতি হিসেবে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়াকেই বোঝায়। যারা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা প্রাথমিক পর্যায়ে হৃদরোগ নির্ণয়ের জন্য অবহেলা না করে এসব উপসর্গগুলোতে দৃষ্টি রাখবেন। তাই প্রাথমিক অবস্থা থেকে আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। অন্যথায় জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শমশের হার্ট কেয়ার এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাবর রোড, শ্যামলী।

সর্বশেষ খবর