শিশুরা চঞ্চল হবে এটাই স্বাভাবিক। শিশুরা দৌড়াবে, শব্দ করবে, বাঁশি বাজাবে হৈচৈ করবে এটা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য। কিন্তু এ চঞ্চলতার কারণে যদি শিশুর শিক্ষাজীবন ব্যাঘাত ঘটে পরিবারের অন্য সদস্যরা বিরক্তবোধ করে প্রশ্ন আসতে পারে শিশুটি কি স্বাভাবিক না অসুস্থ। তার চিকিৎসার দরকার কিনা, যেখানেই ওই শিশুটিকে নেওয়া হয় সেখানেই অতিরিক্ত চঞ্চলতা করে তখন কিন্তু এ প্রশ্ন হাজারও মায়ের হাজারও বাবার। শিশুদের মানসিক সমস্যার মধ্যে এডিএসডি একটি অন্যতম। এটা মন ও ব্রেনের অসুখ। ছয়-সাত বছরের আগেই শুরু হয়ে থাকে। ছেলেমেয়ে সবারই হতে পারে, তবে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে প্রায় চারগুণ বেশি হয়।
লক্ষণসমূহ : বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসতে পারে। খুব ছোটাছুটি করা, অনেক শিশুকে দেখা যায় প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে দিক-বিদিক ছোটাছুটি ও লাফালাফি করছে। এটা ভাঙছে, ওটা ভাঙছে, এক জায়গায় স্থির থাকে না, ক্লাসে বসে না, একদম স্থির থাকতে চায় না। শিশুরা যখন লেখাপড়া করতে বসে, টিভি দেখতে বসে, খেলাধুলা করতে যায় তখন মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। যেসব জায়গাতে মনোযোগের বেশি দরকার বিশেষ করে ক্লাসে, পাঠ্যসূচি তৈরি করতে, কোথাও লাইনে দাঁড়াতে, এসব জায়গাতে এ ধরনের বাচ্চারা খুবই অধৈর্য হয়ে পড়ে যা অন্য বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায় না। তখন কিন্তু সতর্ক হওয়া উচিত কোনো সমস্যা আছে কিনা? অনেক সময় দেখা যায় হঠাৎ করে কিছু করে ফেলছে, ভেঙে ফেলেছে, যেমন- গরম কিছুতে হাত দিয়ে ফেলা, বৈদ্যুতিক সুইচে হাত দিয়ে ফেলল অথবা এমন কিছু করে ফেলল যার পরিণতি সে বুঝতে পারে না।
কেন শিশুরা এরকম করে : এক কথায় কোনোকিছুকে দায়ী করা যায় না। সামাজিক ও পারিবারিক কারণের মধ্যে— বড় পরিবার, পিতা-মাতার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি, আলাদা হয়ে যাওয়া, ঝগড়া-মারামারি, অশান্তি, দরিদ্রতা, ছোটবেলায় পুষ্টিহীনতা উল্লেখযোগ্য। বায়োলজিক্যাল কারণের মধ্যে (ক) নিউরো ট্রান্সমিটা তারতম্য থাকতে পারে (খ) ছোটবেলায় ব্রেন ড্যামেজ অথবা আঘাত পাওয়া যা হয়ত অনেক বাবা-মা বুঝতে পারে না (গ) ব্রেনের দুটি অংশের মধ্যে ডানদিকের ব্রেনের সমস্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হয়।ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন
সহকারী অধ্যাপক, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।