রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ

ক্যান্সার ভয় নয় জয় করুন

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

ক্যান্সার ভয় নয় জয় করুন

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এ দিনটি। এবারের প্রতিপাদ্য— ‘উই ক্যান, আই ক্যান’। ক্যান্সার শব্দটি শুনলে যে কেউ আঁতকে ওঠেন। অনেকের দৃষ্টিতে ক্যান্সার মানেই মৃত্যু। এক সময় মনে করা হতো, ক্যান্সারের কোনো অ্যানসার (উত্তর) নেই। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান আর প্রযুক্তির উন্নতি ও অগ্রগতির ফলে এ ধারণাগুলো আর মোটেই সত্য নয়, ক্যান্সারের চিকিৎসাও আর অজেয় নয়। খুব সহজেই অনেক ক্যান্সারের নিরাময় সম্ভব। শুধু দরকার সময় মতো সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা গ্রহণ করা। ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের যা যা করতে হবে তা হলো জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, ক্যান্সারের এক-তৃতীয়াংশ কারণ জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িত, যা অনেকে ইচ্ছা করলেই নিয়ন্ত্রণ করে ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে পারেন। নিচের কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত— * ধূমপানসহ তামাকের যে কোনো ধরনের ব্যবহার পরিহার করা। * মদপান পরিহার করা। * শিরায় ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণসহ অন্য যে কোনো নেশা পরিহার করা। * সঠিক খাদ্যাভ্যাস, সুষম খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ (ফাইবার) ও এন্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার খাওয়া, বিশেষ করে তাজা মৌসুমি ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া, চর্বিজাতীয় ও তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়া, প্রিজারভেটিভ বা কেমিক্যালযুক্ত খাবার বর্জন, ফাস্ট ফুড ও কোমল পানীয় বর্জন ইত্যাদি। * আর্সেনিকমুক্ত পানি পান। * শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা, এজন্য নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম এবং সঙ্গে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা। * দীর্ঘসময় সরাসরি সূর্যের নিচে না থাকা, প্রয়োজনে ছাতা বা হ্যাট ব্যবহার করা। * যৌনাভ্যাসের ক্ষেত্রে সামাজিক নৈতিকতা মেনে চলা এবং অস্বাভাবিক যৌনাচার পরিহার করা। * রক্তদান বা গ্রহণ অথবা যে কোনো ইঞ্জেকশন গ্রহণের সময় এবং এন্ডোস্কপি, কলোনোস্কপি ইত্যাদি পরীক্ষার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। * বেশ কিছু জীবাণুর বিরুদ্ধে টিকা নিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব, যেমন হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের টিকা ইত্যাদি। * যেসব জীবাণু ক্যান্সার তৈরি করতে পারে তা শরীরে ধরা পড়া মাত্র চিকিৎসা করে ফেলা। * কর্মক্ষেত্রে ক্যান্সার তৈরিকারী রেডিয়েশন বা কেমিক্যালের সংস্পর্শ পরিহার করা। * সন্দেহজনক যে কোনো উপসর্গ যেমন চাকা বা গোটা, ক্ষত, তিলের রং পরিবর্তন, দীর্ঘদিনের জ্বর ইত্যাদি দেখা দিলে অবহেলা না করা। * এছাড়া প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তিরই উচিত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো যাতে শরীরে কোনো ক্যান্সার দানা বাঁধতে শুরু করলে তা প্রাথমিক অবস্থাতেই দমন করা সম্ভব হয়। বিশেষ করে বয়স্কদের বৃহদান্ত্র বা কোলন, মহিলাদের জরায়ুমুখ ও স্তন, পুরুষদের প্রোস্টেট ইত্যাদি নিয়মিত পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বীকৃত। এখন আর ক্যান্সার মানেই অবধারিত মৃত্যু নয়। একটু সচেতন হলেই ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই বিভীষিকার হাত থেকে বেঁচে থাকতে হলে দরকার যথাযথ শিক্ষা ও সচেতনতা। তাই এসব বিষয়ে আরও সতর্ক ও যত্নবান হতে হবে।

লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু

শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর