শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশ্ব থাইরয়েড দিবস আজ

হাইপোথাইরয়েডিজমের সাতকাহন

অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু

হাইপোথাইরয়েডিজমের সাতকাহন

বিশ্ব থাইরয়েড দিবস আজ। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিনটি। মূলত থাইরয়েড বিষয়ে জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে ইউরোপিয়ান থাইরয়েড অ্যাসোসিয়েশন ২০০৮ সাল থেকে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস পালন শুরু করে। হরমোন নিঃসরণকারী গ্রন্থির মধ্যে থাইরয়েড একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি। এটা গলার সম্মুখভাগে প্রজাপতির মতো ত্বক ও মাংসের গভিরে কণ্ঠনালির সামনে অবস্থান করে। এই গ্রন্থিনিঃসৃত হরমোন শরীরের সমস্ত বিপাক প্রক্রিয়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করে বিধায় চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এ গ্রন্থিটির আকার বড় হলে গলগণ্ড নামক রোগ হয়, যাকে স্থানীয় ভাষায় ঘ্যাগও বলা হয়ে থাকে। থাইরয়েড গ্রন্থিজনিত রোগকে কার্যগত দিক থেকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ১) হাইপোথাইরয়েডিজম, ২) হাইপারথাইরয়ডিজম। হাইপোথাইরয়েডিজমে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড কাজ করে না বা কম কাজ করে। অন্যদিকে হাইপারথাইরয়ডিজমে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বেশি মাত্রায় সক্রিয় হয়ে পড়ে।

হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণ : ১) যেসব অঞ্চলে আয়োডিনের অভাব রয়েছে সেখানে আয়োডিনের অভাবজনিত কারণে হাইপোথাইরয়ডিজম দেখা যায়।

২) নবজাতক শিশুদের মধ্যে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড তৈরি না হলে কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়ডিজম দেখা যায়।

৩) এ ছাড়া চিকিৎসাজনিত কারণেও এই অসুখ হতে পারে। অপারেশনের কারণে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বাদ দিতে হলে বা অন্য কারণেও থাইরয়েড নষ্ট হয়ে গেলে এই সমস্যা হতে পারে। ৪) থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি সক্রিয় হলে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড নষ্ট হয়ে যায়। অটোইমিউনো রগে এ ধরনের সমস্যা হয় যার ফলশ্রুতিতে হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত হতে পারে।

৫) এ ছাড়া বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত হতে পারে।

লক্ষণ : ১। অবসাদগ্রস্ত হওয়া, সঙ্গে অলসতা, ঘুম, ঘুম ভাব। ২। ওজন অল্প বেড়ে যায়, ৫-৬ কিলো বেড়ে যেতে পারে। ৩। কণ্ঠস্বর খসখসে হয়ে যাওয়া। ৪। শীত শীত ভাব দেখা যায়। ৫। চুল পড়তে শুরু করে। ৬। ত্বক ঠাণ্ডা ও খসখসে হয়ে যায়। ৭। স্মৃতিশক্তি কমে যায়। ৮। মন-মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ৯। কোষ্ঠকাঠিন্য শুরু হয়। ১০। ব্লাড প্রেশার বাড়তে পারে। ১১। বন্ধ্যত্ব সমস্যা হতে পারে। ১২। গর্ভধারণকালে গর্ভপাত হতে পারে। ১৩। কনজেনিটাল হাইপো-থাইরয়ডিজমে শিশুর ব্রেনের বিকাশ হয় না। ১৪। ক্ষুধা মন্দা শুরু হয়।  ১৫। পিরিয়ডের সমস্যা হতে পারে।

হাইপোথাইরয়েডের সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে— ১) হাইপোথা ইরয়ডিজমের অন্যতম কারণ হচ্ছে খাবারে আয়োডিনের স্বল্পতা থাকা। তাই পর্যাপ্ত আয়োডিন জাতীয় খাবার (খাবার লবণ ও সামুদ্রিক মাছ) খেতে হবে।

২) হাইপোথাইরয়েডের সমস্যায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ৩) বেশি করে খনিজ লবণ সমৃদ্ধ খাবার খান। ৪) প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম করুন বা আপনার শারীরিক কার্যক্রম বাড়িয়ে দিন। এর ফলে শরীরে এমনকি থাইরয়েড গ্রন্থিতে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। হাইপারথাইরয়ডিজমে যে সমস্যা দেখা দেয়— ১। ক্ষুধা বেড়ে গেলেও ওজন কমতে থাকে। ২।  গরম অসহিষ্ণুতা। ৩। বুক ধড়ফড় করে। ৪। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ৫। পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দেয়। ৬। ত্বক কালো হয়ে যায়। ৭। হার্টের সমস্যা হতে পারে।৮। ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়।

৯। হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়। ১০। হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা।

লেখক : ইএনটি বিশেষজ্ঞ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর