বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

রোগ নিরাময়ে যোগব্যায়াম

রোগ নিরাময়ে যোগব্যায়াম

ইয়োগা বা যোগব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণই শুধু করে না, রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে সারা বিশ্বে ইয়োগা চর্চার বিকাশ ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রে দুই কোটি মানুষ ইয়োগা চর্চা করছেন। ইতিবাচক চিন্তা, প্রাণায়াম, নিউরোবিক জিম, মেডিটেশনের সমন্বয়ে ইয়োগার পরিপূর্ণ প্রয়োগে মানুষকে তার ভিতরের সুপ্ত অসীম শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে পারে। জাতিসংঘ ২১ জুনকে আন্তর্জাতিক ইয়োগা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং ১৯০টি দেশের ২৬০টিরও বেশি শহরে তা পালিত হচ্ছে। তাই এ যোগব্যায়ামকে জীবনযাপনের অংশ করে তুলুন, দেহ-মনের সুস্থতা ও শান্তি নিশ্চিত হবে। ওজন কমানো, শক্তিশালী নমনীয় শরীর, উজ্জ্বল ত্বক, শান্ত মন, ভালো স্বাস্থ্য ইত্যাদি যা কিছু আমরা পেতে চাই সব কিছুর চাবি আছে যোগাসনে। এতে অনেক রকম শারীরিক সমস্যা যথা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, করোনারি আর্টারি ব্লকেজ ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এবং শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সুস্থ জীবন কাটানো সম্ভব। যোগ হলো এক জীবনদর্শন, যোগ হলো আত্মানুশাসন, যোগ হলো এক জীবন পদ্ধতি। যোগ শুধু বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিই নয়, বরং যোগের প্রয়োগ ব্যাধিকে নির্মূল করে। এটি এক বিধাতা প্রদত্ত শুধু শরীরেরই নয়, সমস্ত মানসিক রোগেরও চিকিৎসা শাস্ত্র। যোগ অ্যালোপ্যাথির মতো কোনো লাক্ষণিক চিকিৎসা নয়, বরং রোগের মূল কারণকে নির্মূল করে আমাদের ভিতর থেকে সুস্থ করে তোলার এক উপায়। নিয়মিত যোগাভ্যাসের উপকারিতার মধ্যে কয়েকটি—

ফিটনেস : শারীরিকভাবে সুস্থ মানেই কিন্তু পুরোপুরি ফিট থাকা নয়। তখনই পুরোপুরি ফিট যখন মানসিক, আধ্যাত্মিক, শারীরিক ও সামাজিকভাবেই আপনি সুস্থ থাকবেন। আপনার আবেগ থাকবে আপনার নিয়ন্ত্রণে। কথায় বলে, রোগের অনুপস্থিতি কিন্তু স্বাস্থ্য নয়, স্বাস্থ্য হলো জীবনের বহুমুখী বহিঃপ্রকাশ। আপনি কতটা আনন্দ এবং উৎসাহের সঙ্গে জীবনকে উপভোগ করতে পারছেন। সেটাই কিন্তু আপনার স্বাস্থ্যের প্রমাণ।

স্ট্রেস বা চাপ কমায় : সারা দিনের কাজের চাপে আমরা সবাই কমবেশি কাহিল হয়ে পড়ি। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর ক্লান্ত লাগে। অনেক সময়ই মেজাজ খারাপ থাকে। এর কারণ স্ট্রেস। শারীরিক এবং মানসিক দুভাবেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি। যোগাসন এর থেকে মুক্তি দেয়। যোগাসন, প্রাণায়াম এবং ধ্যান করে স্ট্রেসকে দূরে রেখে প্রাণোচ্ছল জীবনযাপন করা সম্ভব।

মানসিক শান্তি : একটু যোগাসন, ধ্যান, প্রাণায়াম, নিউরোবিক ইত্যাদির মাধ্যমে মনোঃসংযোগ এবং মানসিক শান্তি উভয়ই বাড়ানো সম্ভব।

প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : নিয়মিত যোগাভ্যাস আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। চারদিকে এখন এত দূষণ যে সব সময় নানারকম জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে এবং ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। এর  বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকা দরকার।

এনার্জি বাড়ায় : মাত্র কয়েক মিনিটের যোগাভ্যাস কিন্তু সারা দিনের পরেও এনার্জির জোগান দেবে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ যোগাসন করলে কাজের ফাঁকেও ফ্রেশ আর এনার্জেটিক থাকা যাবে। নানারকম রোগ যোগাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেমন—উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, অ্যাজমা, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন, দুশ্চিন্তা এবং অবসাদ ইত্যাদি।

সুস্থ সুন্দর সম্পর্ক : যোগাভ্যাস আমাদের কাছের মানুষ অর্থাৎ বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়-পরিজন, অফিস কলিগ সবার সঙ্গেই সম্পর্ক ভালো রাখতে সাহায্য করে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে যোগ্যব্যায়াম চর্চাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। রাজধানীর ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরেও নিয়মিত ভোরবেলায় যোগ ব্যায়াম করছেন অনেক মানুষ। আসলে যোগাভ্যাস একটি নিয়মিত অভ্যাস। দুদিন করে ছেড়ে দিলে হবে না, নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমেই এর সুফল পাওয়া সম্ভব।  

অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস, সিইও, হলিস্টিক

হেলথ কেয়ার সেন্টার, পান্থপথ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর