সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

এনাল ফিসারের কারণ ও লক্ষণ

ডা. আফরিন সুলতানা

এনাল ফিসারের কারণ ও লক্ষণ

আমাদের দেশে অসংখ্য মানুষ মলদ্বারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন। যেমন-পাইলস, ফিশার, ফিস্টুলা ইত্যাদি। কিন্তু অনেকেই বিশেষ করে মহিলারা এই রোগগুলোকে গোপন স্থানের সমস্যা মনে করেন এবং মলদ্বারের রোগের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহী থাকেন। ফলশ্রুতিতে অনেকেই গ্রামেগঞ্জে এমনকি শহরেও কবিরাজ কিংবা অনভিজ্ঞ লোক দ্বারা অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। মলদ্বারের বা পায়ুপথের রোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এনাল ফিশার যা আমাদের অনেকের কাছেই ‘গেজ’ রোগ নামে পরিচিত। এনাল ফিশার রোগে মলদ্বারের চামড়ার ফাটল বা চির হওয়া যা সাধারণত মল শক্ত হলে বা ঘন ঘন মলত্যাগের কারণে মলদ্বার ফেটে ঘা হয়ে থাকে। এ রোগ বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক যে কারও হতে পারে। তবে তরুণ/ মাঝবয়সীদের এ রোগ বেশি হয়ে থাকে। পুরুষ কিংবা নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই এ রোগ সমানভাবে হয়ে থাকে।

কারণসমূহ : এনাল ফিশার হওয়ার জন্য মূলত দায়ী হলো কোষ্টকাঠিন্য। মলত্যাগের সময় কোত/বেশি চাপ দেওয়ার অথবা মল শক্ত হয়ে বের হওয়ার সময় মলদ্বার ফেটে যায় বা ঘা হয়। আঁশযুক্ত খাদ্য না খাওয়া বা কম খাওয়ার কিংবা ফলমূল বা শাকসবজি কম খাওয়া মল শক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। ঘন ঘন মলত্যাগ কিংবা ডায়রিয়া হওয়া। মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভকালীন সময়ে ও বাচ্চা প্রসব পরবর্তী সময়ে (নরমাল ডেলিভারি) এই রোগ দেখা দিতে পারে। মলদ্বারে সাপোসিটরি দেওয়ার জন্য। এক্ষেত্রে জেনে রাখা জরুরি যে, মলদ্বারের অন্যান্য রোগ যেমন—টিবি, Chron’s Disease, ক্যান্সার লক্ষণ: মলদ্বারে ফিশারের প্রধান  লক্ষণ বা উপসর্গ হলো ব্যথা, জ্বালাপোড়া ও রক্তক্ষরণ। তবে এই রোগে রক্তক্ষরণের পরিমাণ সাধারণত কম থাকে।

Acute Anal Fissure : এক্ষেত্রে সাধারণত রোগীরা মলত্যাগের পর মলদ্বারে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। যা কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে তাজা রক্ত যেতে পারে (পায়খানার সঙ্গে অথবা ফোঁটায় ফোঁটায়)।

Chronic Anal Fissure : দীর্ঘস্থায়ী মলদ্বারের ঘায়ে রোগীদের ভিন্ন উপসর্গ থাকে। মলদ্বারে অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড, ফুলে থাকা (Sentineal Piles) চুলকানি, রস পড়া ইত্যাদি। এক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণত তীব্র ব্যথা হয় না বা অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা একবারেই থাকে না। অনেক সময় মলদ্বারের ভিতর একই মাংসপিণ্ডের মতো থাকতে পারে (Hypertrophied Anal Papillae)।

প্রতিরোধ : প্রতিরোধের মূল উপায় হলো জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তন। কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার যেমন ফলমূল, সবুজ আঁশযুক্ত শাকসবজি ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। শক্তি প্রয়োগে মল ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

চিকিৎসা : ওষুধের মধ্যে রয়েছে মল নরম করার এবং মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করার ওষুধ। এজন্য আঁশজাতীয় খাবার যেমন—সবজি, টাটকা ফলমূল, ইসপগুলের ভুসি খাওয়া যেতে পারে। সিজ বাথ (Sitz Bath) নিলে উপকার পাওয়া যায়। নিয়ম হচ্ছে আধ-গামলা লবণ মিশ্রিত গরম পানিতে নিতম্ব ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। মলদ্বারে ব্যথানাশক মলম ব্যবহার করা যায়।

অপারেশন : রক্ষণশীল চিকিৎসা বা ওষুধে রোগ না ভালো হলে অথবা রোগ বেশি দিন স্থায়ী হলে তা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো অপারেশন।

Lateral Internal Sphincterotomy এই অপারেশন করলে ৯৭%-৯৮% ভাগ রোগী সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায় এবং নিয়ম মেনে চললে তা আবার হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না। আরেকটি বিষয় অনেকে ভাবেন, অপারেশনের পর মলত্যাগ করবেন কিভাবে? অপারেশনের অব্যবহিত পরে মলত্যাগ করা সম্ভব। সাধারণত ১/২ দিনের মধ্যে রোগী বাড়ি চলে যায়।

লেখক : সার্জারি বিশেষজ্ঞ,  হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর