সোমবার, ১৬ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
পারকিনসন্স

নীরব ঘাতক

ডা. মো. জাহিদ রায়হান

নীরব ঘাতক

পারকিনসন্স রোগের সুনির্দিষ্ট লক্ষণগুলো থাকলে ডায়াগনসিসটা বেশ সহজ হয়ে যায়। কিন্তু এ রোগটির সঙ্গে প্রায় একই ধরনের আরও কিছু ব্রেনের রোগের যদি সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে ডায়াগনসিসের ক্ষেত্রেই জটিলতার সৃষ্টি হয়। আর একে বলা হয় পারকিনসন্স প্লাস। তবে মোটা দাগে এ রোগটি নিশ্চিত করার সহজ উপায় হলো— প্রায় সবক্ষেত্রেই রোগীর হাঁটাচলার গতি কমে যায় আর কোনো কাজ করতে গেলেই হাত-পা কাঁপতে থাকে। রোগীর বসা থেকে উঠা, হাঁটা, ঘোরাসহ দৈনন্দিন যাবতীয় কাজই আস্তে আস্তে খুব স্লো হয়ে যায়। রোগটি বাড়তে থাকলে রোগী সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটা শুরু করে এবং সেক্ষেত্রে সামনের দিকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলে ভারসাম্য রক্ষার জন্য রোগী একটু দৌড়ানোর মতো করে হাঁটে। এরপর কথাবার্তায় জড়তা, প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণহীনতা, যৌন দুর্বলতাসহ নানারকম উপসর্গ দেখা দেয়। পারকিনসন্স সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পরের রোগ। পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ব্রেনের ভিতর সাবসটেনসিয়া নাইগ্রা নামক অংশটি ডোপামিন নামের একটা স্নায়ু উত্তেজক পদার্থ তৈরি করে। পারকিনসন্স রোগটি শুরুই হয় এ ডোপামিনের উৎপাদন যখন থেকে কমা শুরু করে। কিন্তু এ ডোপামিন কেন কমে, কীভাবে কমে, এ কমার পেছনে কোনো জেনেটিক কারণ আছে কিনা— এসবের উত্তর সম্পূর্ণভাবে এখনো পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে নিউরো সাইন্টিস্টরা এ ডোপামিন কমার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয়কে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেছেন। সেগুলোর অন্যতম হলো— দীর্ঘদিন ধরে ভালো ঘুম না হওয়া, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় Rapid Eye Movement Sleep Disorder. মাইন্ড স্টর্মিং আরেকটা কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য, এটির ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত যে, কোনো ব্যক্তি যদি প্রায় ২০ বছর ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভোগে তাহলে তার পারকিনসন্স রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত। এছাড়া সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন যেমন জুয়া খেলা, অনিয়ন্ত্রিত সেক্স ড্রাইড, পর্নোগ্রাফি, শৌখিন জিনিসপত্র কেনাকাটার ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা ইত্যাদিকে এ রোগটি হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। যেহেতু রোগটি নিরাময়যোগ্য না, শুধু রোগটির গতিবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে ভালো থাকার সময়টাকে বাড়িয়ে দেওয়া যায়; তাই এ রোগের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি হলো ওষুধের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটি অত্যাধুনিক অপারেশনের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করা। এ অপারেশনের প্রিন্সপ্যাল হলো ডোপামিনের কাজটি একটি বিকল্প বিদ্যুৎ সার্কিটের মাধ্যমে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া। এবং ওষুধের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যত দ্রুত অপারেশনটি করা যায় ততই রোগীর পরবর্তীতে ভালো থাকার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে অপারেশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি শ্রমসাধ্য ও জটিল প্রক্রিয়া। ফাংশানাল নিউরোসার্জন, মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার নিউরোলজিস্ট ও নিউরোসাইকিয়াট্রিস্ট সমন্বয়ে গঠিত একটা টিমকে রোগী পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ রোগের সঙ্গে যদি স্মৃতিভ্রষ্টতা, খুব আস্তে কথা বলা ইত্যাদি সমস্যাগুলো থাকে তবে অপারেশনটি বাদ দেওয়া হয় কারণ এতে রোগী বাকশক্তিহীন ও স্মৃতিহীন হয়ে যেতে পারে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, নিউরো সার্জারি ও ফাংশানাল নিউরো সার্জন, ডিএইচএস, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর