রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

সুস্থ থাকতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

সুস্থ থাকতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস

সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে স্বাস্থ্য খারাপ হওয়া কিংবা অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো তৈরি হয়। তাই সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য সচেতনভাবে নির্বাচন করুন আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা। সঠিক খাদ্যাভ্যাস শরীর সুস্থ রাখে, কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বিষণ্নতা দূর করে, মনকে সতেজ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পরিমিত খাবার খান, সকালের নাশতা, দুপুর এবং রাতের খাবার কি খাবেন, তার একটা প্ল্যান করে নিতে পারেন। খাদ্য তালিকায় প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল, সালাদ পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখুন। অতিরিক্ত ভাত বা ভাতজাতীয় খাদ্য পরিহার করুন। লাল আটা ও লাল চাল খাবার অভ্যাস করতে পারেন। অধিক চর্বিযুক্ত ও ভাজাপোড়া ভুনা খাবার পরিহার করুন। খাবারে অতিরিক্ত তেল ও মসলা দেবেন না। তবে মাছের তেল খাওয়া যেতে পারে। পাতে লবণ পরিহার করুন। সপ্তাহে এক বা দুদিন মাংস খেতে পারেন, সঙ্গে প্রচুর শাকসবজি খেলে ভালো। বিভিন্ন রকম ডাল একসঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন। এতে দৈনন্দিন আমিষের চাহিদা পূরণ হবে। পাশাপাশি শিম, ছোলা ইত্যাদি খেতে পারেন। এতে আমিষের সঙ্গে খনিজ লবণও পেয়ে যাবেন পর্যাপ্ত পরিমাণে। ডিম ও দুধ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন। বাইরের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে কোমল পানীয়, ফাস্টফুড ও কৃত্রিম রং দেওয়া খাবার। তামাকজাত দ্রব্য, অ্যালকোহল ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য পরিহার করুন। এগুলো ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করা জরুরি। গোগ্রাসে না গিলে আস্তে আস্তে ভালোভাবে চিবিয়ে খান। এতে মুখের এনজাইম বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা পরিপাকে সহায়ক। খাওয়ার সময় কথাবার্তা বা গল্পগুজব না করাই ভালো। খাওয়ার মাঝে বারবার পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এতে হজমে ব্যাঘাত ঘটে। গুরুপাক খাবার খেলে এক টুকরা লেবু খোসাসহ চিবিয়ে খেতে পারেন, সঙ্গে টকদই খেতে পারেন। রাতে খেয়েই সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়া অনুচিত, খাওয়ার পর অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট পায়চারি করুন, যা হজমে সহায়তা করবে, ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে। আবার অতিরিক্ত পরিশ্রমের পরপরই খাবেন না। হাত-মুখ ধুয়ে ৫-১০ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে তারপর খান। যাদের ওজন বেশি, তারা অনেকেই সকালে কিছুই খান না, যা অনুচিত। মাত্রাতিরিক্ত ডায়েট কন্ট্রোল করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেন স্বাভাবিক সৌন্দর্য। ডায়েট কন্ট্রোল মানে একেবারে না খেয়ে থাকা নয়, বরং পরিমিত পরিমাণে সব কিছু খাওয়া উচিত। ভাত ও ভারি খাবারের পরিবর্তে সালাদ ও সবজি খান প্রচুর পরিমাণে। সামুদ্রিক মাছ থাকতে পারে খাবারের টেবিলে। ওজন কমাতে আইসক্রিম, চকোলেট, কেক, বিস্কুট এবং মিষ্টি জাতীয় খাদ্যদ্রব্য পরিহার করুন। প্যাকেটজাত ফলের রসের পরিবর্তে তাজা ফল খান। গর্ভবতী নারী, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি বা লিভারের রোগে আক্রান্তদের খাদ্যতালিকা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হওয়া বাঞ্ছনীয়। মনে রাখবেন, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম ও ব্যায়াম করা জরুরি। তাই সুস্থ থাকতে গড়ে তুলুন সঠিক খাদ্যাভ্যাস।

লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর