সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
কোরবানি ঈদের ডাইনিং টেবিল

চর্বি-ঘি এর মিলনমেলা

চর্বি-ঘি এর মিলনমেলা

কোলেস্টেরল এবং কোরবানির ঈদ। এ দুয়ের মাঝে একটা নীরব সম্পর্ক রয়েছে। কোরবানি মানেই খাবার দাবারের ক্ষেত্রে বাড়তি চর্বির উপস্থিতি। লাল মাংস, পোলাও এবং চর্বি-ঘির মিলনমেলা হচ্ছে কোরবানি ঈদের ডাইনিং টেবিল। শুধু কোরবানিই নয়, যে কোনো নিমন্ত্রণের ভোজনপর্বেও একই দৃশ্য চোখে পড়বে। খাওয়ার পর এই চর্বি বাসা বাঁধে মানুষের রক্তে, বেড়ে যায় রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা। কোলেস্টেরল মাত্রা বেশি থাকা মানেই রক্তে শত্রুর সঙ্গে বসবাস। রক্তের বাড়তি কোলেস্টেরল হৃদপিণ্ডের মাংসপেশিকে নির্জীব মৃতাবস্থায় নেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। আর এ কারণেই কোরবানির ভোজনে কোলেস্টেরলের কথা মনে রাখতে হবে, বিশেষ করে যাদের রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা বেশি কিংবা বিপদ সীমার কাছাকাছি রয়েছে। উৎসব আনন্দের আতিশয্যে শত্রু কোলেস্টেরলের কথা যেন ভুলে না যান সেটাই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই এ লেখার মাধ্যমে। কোলেস্টেরল একটি আলোচিত বিষয়। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে কোলেস্টেরল একটি ভীতিকর উপাদান। বয়স চল্লিশের কোঠায় পৌঁছানোর পর রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা জেনে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ কোলেস্টেরল নীরবে আপনার মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। মানুষের শরীরের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী দুটি অঙ্গের অসুস্থতার জন্যই কোলেস্টেরলকে দায়ী করা যায়। হৃদপিণ্ডের হার্ট অ্যাটাক এবং মস্তিষ্কের স্ট্রোক এ দুয়ের জন্য অনেক সময়েই কোলেস্টেরলকে দোষারোপ করা হয়ে থাকে।

রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়েই অনেকের মাঝেই বিভ্রান্তি রয়েছে। কেউ কেউ রক্তে টোটাল কোলেস্টেরল মাত্রা ২০০ মিঃগ্রা/ডিএল থাকলেই সেটাকে নিরাপদ বলে মনে করেন। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। টোটাল কোলেস্টেরল মাত্রা ১৫০ মিঃগ্রা/ডিএল বা তার নিচে হলে তাকে নিরাপদ মাত্রা বলা যায়। সাধারণতভাবে নিরাপদ মাত্রার কোরেস্টেরল থাকা অবস্থায় হার্ট অ্যাটাক দেখা যায় না। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে কোলেস্টেরল মাত্রা ১৫০-২০০ থাকা অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কোলেস্টেরল মাত্রা ৩০০ এর চেয়ে দ্বিগুণ বেশি হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ১৬ বছর মেয়াদি আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব লোকের কোলেস্টেরল মাত্রা ১৫০-২০০ এর মধ্যে তাদের প্রায় শতকরা ৩৫ ভাগ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাই কোলেস্টেরল নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে এ সম্পর্কে সচেতন হওয়াটাই হচ্ছে আসল কাজ। এদিকে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ১৫০ এর বেশি হলেই ধমনীর অভ্যন্তরীণ দেয়ালে তা জমতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে পুঞ্জীভূত হয়ে প্লাক বা পিণ্ডের মতো হয়ে সেখানে লেগে থাকে। এভাবে রক্তনালী বিশেষ করে ধমনীর পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা হৃদপিণ্ডে ঘটলেই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। কোলেস্টেরল মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঘটনাকে সিঁড়ির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ কোলেস্টেরল মাত্রা ১৫০ থেকে যত উপরে উঠবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তত বেশি বাড়বে। কিন্তু কোলেস্টেরল মাত্রার এই ঊর্ধ্বগতিকে রোধ করা সম্ভব বা কমিয়ে আনাও সম্ভব। শুধু কোলেস্টেরল মাত্রা সম্পর্কে ধারণা নিলেই চলবে না সেই সঙ্গে সার্বিক কোলেস্টেরল সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে। তবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে হলে টোটাল কোলেস্টেরল মাত্রা ১৫০ এর নিচে রাখতে হবে।

প্রলোভন ত্যাগ করতে হবে চর্বিযুক্ত খাবারের প্রতি

অবাক ব্যাপার হচ্ছে পশুদের এথেরোস্ক্লেরোসিস কিংবা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে শোনা যায় না। যদিও অনেক পশু শুধু মাংস ভক্ষণ করেই বেঁচে থাকে। কিন্তু তারপরও পশুদের হার্ট অ্যাটাক জাতীয় রোগ হয় না। কারণ পশুর স্বল্পদৈর্ঘ্যের খাদ্যনালিটি এমনভাবে ডিজাইন করা যা শাক সবজি হজমের জন্যই বেশি উপযোগী। যার ফলে পশুর শরীরে শোষিত কোলেস্টেরলের প্রায় পুরোটাই ভালো জাতের কোলেস্টেরল এইচডিএল। কিন্তু মানুষের পরিপাকতন্ত্র সে তুলনায় অনেক দীর্ঘ বলে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ারপর খারাপ জাতের কোলেস্টেরল— এইচডিএলই বেশি শোষিত হয়। কাজেই কোলেস্টেরল মাত্রা কমানোর মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে চাইলে পশুচর্বি বর্জন করতে হবে বিশেষভাবে। এতে রক্তে খারাপ জাতের কোলেস্টেরল- এলডিএল মাত্রা কমে যাবে। শাকসবজি খাওয়ার মাত্রা বাড়ালে শাকসবজির এন্টি অক্সিডেন্ট রক্তনালীর ভিতরের দেয়ালে খারাপ জাতের কোলেস্টেরল এলডিএলের আঠালোভাবে লেগে থাকার প্রবণতা হ্রাস করে।

ডা. সজল আশফাক, সহযোগী অধ্যাপক, মিলড্রেড এলি ক্যারিয়ার কলেজ, নিউ ইয়র্ক সিটি ক্যাম্পাস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর