রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফুসফুস ক্যান্সারের কিছু কারণ

অধ্যাপক ডা. একেএম মোস্তফা হোসেন

ফুসফুস ক্যান্সারের কিছু কারণ

মানবদেহের মারাত্মক ও জটিল ব্যাধিসমূহের মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম। মানবদেহের কোষগুলোর অতিমাত্রায় বৃদ্ধি ও আকৃতিগত পরিবর্তনের কারণেই ক্যান্সার নামক রোগটির সূত্রপাত। স্বাভাবিকভাবেই ক্যান্সার নামক শব্দটি আমাদের কাছে একটি ভীতিকর শব্দ। মরণঘাতী হিসেবে এইডস-এর পরেই ক্যান্সারের অবস্থান। দেহের অন্যান্য স্থানের ক্যান্সারের মতো ফুসফুসের ক্যান্সারও একটি মারাত্মক ব্যাধিই শুধু নয় বরং আরও বেশি মারাত্মক ও জটিল। প্রতি বছর বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। যদিও মহিলাদের চেয়ে পুরুষই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। ইদানীং মহিলাদের মাঝে ধূমপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিলারাও অধিক হারে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ফুসফুসের ক্যান্সার কোনো জীবাণুঘটিত রোগ নয়। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও এ রোগ হতে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভের কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি অদ্যাবধি আবিষ্কার হয়নি। যদি একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি ধরা পড়ে তবে তা থেকে মোটামুটি আরোগ্য লাভ করা যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নিরূপণ দুঃসাধ্যই বলা চলে। জীবাণুঘটিত রোগ না হওয়ায় এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রতিরোধক বা প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিজ্ঞানীরা সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়নি। তাই জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যতটা সম্ভব প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয়ে সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে মৃত্যুহার এবং এ রোগের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপন্নতা কমানোর চেষ্টা সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য অন্যতম দায়ী ধূমপান। যে কারণে যদিও রোগটি তুলনামূলকভাবে পুরুষদের বেশি, ইদানীংকালে নারীদের মধ্যে ধূমপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারাও উল্লেখযোগ্য হারে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ধূমপায়ী ব্যক্তিরাই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বেশি। তবে অধূমপায়ীদের যে এ রোগ হতে পারে না তা কিন্তু নয়। নগরায়নের এই বিশ্বে কালো ধোঁয়াও ফুসফুসে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন-ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, অ্যাসবেসটস ইত্যাদি এ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। বর্তমান উন্নত বিশ্বে পারমাণবিক বর্জ্যও ক্যান্সারের একটি বড় কারণ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ভূপাল কিংবা চেরনোবিল গ্যাস দুর্ঘটনার পর বর্তমান সময়ে সেসব অঞ্চলের মানুষের মাঝে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ যেমন— যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া ভালো হওয়ার পর ফুসফুসের আক্রান্ত স্থানে ক্যান্সার দেখা দিতে পারে।  ফুসফুসের যে কোনো স্থান ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে একরকম হয় না। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি, কাশির সঙ্গে কফ বা রক্ত, শ্বাসকষ্ট, আক্রান্তের দিকে বুকে ব্যথা, হালকা জ্বর, খাদ্যে অনীহা, ওজন হ্রাস ইত্যাদি উপসর্গ বা লক্ষণ নিয়ে হাজির হতে পারে। ফুসফুসের ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য না হলেও এর কারণটি প্রতিরোধযোগ্য। ধূমপান এর প্রধান কারণ। জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ধূমপান প্রতিরোধ করা গেলে এ রোগের উদ্ভব ও প্রতিরোধ করা যাবে বহুলাংশে। কাজেই সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

লেখক : অ্যাজমা ও বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ,

মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর