মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
গত বছর সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা বরিশালে

আত্মহত্যাপ্রবণ টিনএজার

শামছুল হক রাসেল

আত্মহত্যাপ্রবণ টিনএজার

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস ছিল গতকাল। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে এ দিনটি। ধর্মীয় ও আইনের চোখেও আত্মহত্যাকারী একজন অপরাধী। প্রতি বছর বিশ্বে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। আর ৪০ লাখ টিনএজার প্রতি বছর আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এর মধ্যে এক লাখ সফল হয়ে চলে যায় পরপারে।  যুদ্ধ, টেরোরিস্ট বা সন্ত্রাসী আক্রমণ কিংবা খুনের শিকার হয়েও আত্মহত্যার সমতুল্য এত মানুষ মারা যায় না পৃথিবীতে। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন আত্মহত্যা করে প্রায় তিন হাজার মানুষ। প্রিয়জনের আত্মহত্যার যন্ত্রণার পেরেক বুকে ঠুঁকে নিয়ে ৬০ লাখেরও বেশি স্বজন ধুঁকে ধুঁকে পার করছে জীবন। জীবিত থেকেও মৃত তারা। সুই (sui) অর্থ নিজেকে, সিডস  (caeds) অর্থ হত্যা। অর্থাৎ আত্মহত্যা মানে নিজেকে নিজে খুন করা। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে আত্মহত্যার সংখ্যা। সাধারণত দুভাবে আত্মহত্যা সংঘটিত হয়ে থাকে, যার অধিকাংশই পরিকল্পনার মাধ্যমে আত্মহত্যা করে। আর একটি তাত্ক্ষণিক উত্তেজনা বা তাড়নায় ইমপালসিভ আত্মহত্যা। পরিকল্পনাকারীদের মনে প্রথমে আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগে, ইচ্ছার পর পরিকল্পনা করে, তার পর আত্মহত্যার জন্য অ্যাটেমপ্ট গ্রহণ করে। বড় ধরনের বিষণ্নতা রোগের শেষ পরিণতি হচ্ছে পরিকল্পনার মাধ্যমে আত্মহত্যা। বাংলাদেশ জার্নাল অব সাইকিয়াটিতে প্রকাশিত এক মৌলিক গবেষণা রিপোর্টে দেখা যায়, আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকারীদের ৬৫.৪ শতাংশ মানসিক রোগে ভুগেছিল। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ছিল গুরুতর বিষণ্ন রোগী। ২৫ বছরের নিচের তরুণ বয়সীদের হার ছিল সর্বোচ্চ। পুরুষের তুলনায় মহিলার হার ছিল বেশি (৫৪.৪%), বিবাহিত মহিলা ৫৫.৯%। পারিবারিক সমস্যা (৪১.২%)। পরীক্ষায় খারাপ করা, ভালোবাসার ব্যর্থতা ও জটিলতা, বৈবাহিক অশান্তি, অবৈধ প্রেগন্যান্সি ইত্যাদি বিষয়ও ছিল গুরুত্বপূর্ণ (আলী এম-০৫)। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সুইসাইডের হার প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। ২০১৭ সালে আত্মহত্যা করেছেন ১১,০৯৫ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন মানুষ আত্মহত্যায় মারা যাচ্ছেন। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী শুধু বরিশাল বিভাগে আত্মহত্যা করেছেন ২৪৮৫জন। এর মধ্যে ফাঁস লাগিয়ে ১৬০৮, বিষক্রিয়ায় ৮৭১ এবং গায়ে আগুন দিয়ে ৬ জন। অন্যদিকে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১০৬০০জন।

আর ২০১৭ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১,০৯৫ জনে। এদিকে সাম্প্রতিক বছরের তথ্য অনুযায়ী ঝিনাইদহ জেলাকে আত্মহত্যাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।  বাংলাদেশে সুইসাইডের হার প্রতিবছর লাখে ৮-১০ জন। পক্ষান্তরে বিশ্বজনীন এই হার প্রতিবছর লাখে ১৪.৫। অথচ শুধু ঝিনাইদহে এই হার ২৮ থেকে ৩২। ঝিনাইদহে আত্মহত্যাকারীদের ৬৭.২৮% ছিল গৃহবধূ, ৭৩.৪৫% মহিলা, ৬৯.৫৬% অশিক্ষিত, ৭৪.৬১ শতাংশের বয়স ছিল ১১-২৫ বছরের মধ্যে। বাংলাদেশ জার্নাল অব সাইকিয়াট্টিতে রিভিউ আর্টিকেল হিসেবে প্রকাশিত গবেষণাপত্র থেকে আরও দেখা যায়, ৩৭-৫৯% সুইসাইড ঘটেছে পারিবারিক সমস্যার কারণে (আলম এম এফ'০৪)। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, মরণপ্রবৃত্তির অন্তর্মুখিতা সুইসাইড ঘটায়। সহিংসতা অন্তর্মুখী হলে নিজেকে নিঃশেষ করার প্রবৃত্তি জোরাল হয়ে ওঠে। নিজেকে খুন করে মানুষ। আইনের চোখেও আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকারী একজন অপরাধী। আত্মহত্যার পর যেমন থানায় খবর দিতে হয়, তেমনি আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও থানায় খবর জানানোর কথা বলা হয়েছে। আত্মহত্যার চেষ্টা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আত্মহত্যা প্রতিরোধে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। কীটনাশক প্রস্তুতকারী ও বিপণনকারীদের দায়িত্বশীল হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর