রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাড়তি ওজন কমাতে করণীয়

বাড়তি ওজন কমাতে করণীয়

অতিরিক্ত ওজন ও স্নেহ পদার্থের আধিক্যকে সাধারণভাবে মেদবহুলতা মনে করা হয়। এর পরিমাপ হলো বডি-মাস-ইনডেক্স বা সংক্ষেপে বিএমআই। বিএমআই ১৮.৫ থেকে ২২.৯-এর ভিতর থাকাটা বাঞ্ছনীয় বা আদর্শ। যাদের বিএমআই ২৭.৫-এর ওপরে তারা স্থূল/মেদবহুল। পক্ষান্তরে যাদের বিএমআই ২৩-২৭.৪-এর মধ্যে তারা অতিরিক্ত ওজনদার বা ওভারওয়েট। অন্যভাবে বলা যায়, উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজনকে ১০০ শতাংশ ধরা হলে, যাদের ওজন আদর্শ ওজনের ১০১ থেকে ১১৯ শতাংশের মধ্যে তাদের রয়েছে ‘অতিরিক্ত ওজন’ এবং যাদের ১২০ শতাংশের ওপরে তারা স্থূল। সাধারণত মানবদেহে দুই ধরনের চর্বিজাতীয় পদার্থ জমা হয়। প্রথমত, অতিরিক্ত চর্বি নিতম্ব ও ঊরুদেশে জমা হয়। একে ‘গাইনয়েড ডিস্ট্রিবিউশন’ বলে। এতে শরীরের আকৃতি অনেকটা নাশপাতির মতো হয়। এটা সাধারণত নারীদের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত স্নেহ পদার্থ পেটে জমা হয়, যা দেহকে আপেলের মতো আকৃতি দান করে। অর্থাৎ উদরদেশ স্ফীত হয়। একে ‘অ্যান্ড্রয়েড ডিস্ট্রিবিউশন’ বলে। এটা নারী-পুরুষ উভয়েরই দেখা যায় এবং স্নেহ পদার্থের সঞ্চয় রোগের ঝুঁকি থাকে।

রোগের কারণ : মেদবহুলতার নানা কারণের মধ্যে প্রথমেই আসে আচরণগত ব্যাপার। সমীক্ষায় দেখা গেছে, মেদবহুল লোকেরা চিরাচরিতভাবেই (ক্যালরি খরচের তুলনায়) কম খাদ্য গ্রহণের কথা বলে থাকেন। এটা হতে পারে ছোটখাটো দু-একটি খাবার, যা ঘন ঘন খাওয়া হয়, অথচ আমল দেওয়া হয় না। কিছু হরমোনসংক্রান্ত ব্যক্তি বা এন্ডোক্রাইন ডিজিজ। যেমন : Cushing’s Disease, Polycystic Ovary Syndrome ইত্যাদিও মেদবহুলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিছু কিছু ওষুধও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ওজন বাড়ায়, যেমন— ক্লোরপ্রোমাজিন জাতীয় ওষুধ (মাথা ঘোরানো বা বমির জন্য), এমিট্রিপটিলিন (দুশ্চিন্তা দূরকারক), ভ্যালপ্রোয়েট, কার্বামাজেপিন ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা গেছে, তিনটি বিষয় ভবিষ্যতে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাকে বাড়িয়ে তোলে। প্রথমত, বিপাকক্রিয়া কম হওয়া। দ্বিতীয়ত, উচ্চ শ্বাসনিক অনুপাত, অর্থাৎ অধিক শর্করাজাতীয় খাদ্যের বিপাক। তৃতীয়ত, ইনসুলিন হরমোন, যা ডায়াবেটিস হতে বাধা দেয়, তার কার্যক্ষমতা হ্রাস। মেদবহুলতার সঙ্গে যেসব রোগের ঝুঁকি রয়েছে তা হলো ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার, স্ট্রোক, পিত্তথলির রোগ, বাত ও চর্মরোগ, হারনিয়া, স্ট্রেস ইনকন্টিন্যান্স, বন্ধ্যত্ব, শ্বাসতন্ত্রের রোগ। চিকিৎসকের পরামর্শে ওজন কমানোর ওষুধ খেলে ফল পাওয়া যায়। বর্তমানে অরলিস্টেট উপাদানে তৈরি এক ধরনের ওষুধ চর্বি পরিপাক ও শোষণে বাধার সৃষ্টি করে চর্বিকে রক্তে শোষিত হতে দেয় না। এর পাশাপাশি এ ওষুধ কোলস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। এ ছাড়াও লাইপোসাকশন ও লাইপোলাইসিস নামক সার্জারিও করা যায়। লাইপোসাকশনে নলের মাধ্যমে চর্বি গলিয়ে দেহের বাইরে আনা হয়।

ডা. দিদারুল আহসান, চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ,

আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর