মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
হৃদরোগের উপসর্গ

ক্ষণে আছে ক্ষণে নাই

ক্ষণে আছে ক্ষণে নাই

হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের প্রাথমিক অবস্থায় যে ধরনের উপসর্গ পরিলক্ষিত হয় তাকে ম্যাজিক্যাল উপসর্গ বললে ভুল হবে না। রোগের এ ধরনের ম্যাজিক্যাল আচরণের জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকেন। অনেকে বলে থাকেন যে আমি তো ভালোই আছি, তেমন কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হই না, কেবল জোরে হাঁটতে গেলে বুকে একটু চাপ বা ব্যথা অনুভব করি এবং একটু দাঁড়ালেই তা ঠিক হয়ে যায়। অনেককে বলতে শুনেছি, অনেক সময় ভারী কাজ করলেও কোনো অসুবিধা হয় না, আবার কখনো কখনো হালকা কাজ করলেও অসুবিধায় পড়ে যাই। এ ধরনের সমস্যায় পতিত ব্যক্তিরা সংগত কারণেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রাথমিক অবস্থায়, পরিশ্রমকালীন ক্ষণিকের জন্য বুকব্যথা, বুকে চাপ, শ্বাসকষ্ট ও বুক ধড়ফড়ের মতো উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে। পরিশ্রমের সময়ে শক্তি ব্যয় হওয়ার জন্য শরীরে অক্সিজেনের প্রয়োজন বেড়ে যায়। পরিশ্রমকালীন বাড়তি অক্সিজেনের জোগান দেওয়ার জন্য বাড়তি রক্ত সরবরাহের প্রয়োজন হয়। আমরা জানি শারীরিক প্রয়োজনে বাড়তি রক্ত সরবরাহের কাজটি হার্ট করে থাকে। এ সময় হার্ট তার পাম্পিং ক্ষমতা বৃদ্ধি করে অধিক পরিমাণ রক্ত পাম্প করে সরবরাহ করে থাকে। অধিক পরিমাণে রক্ত পাম্প করার জন্য হার্টকে অধিক কাজ করতে হয়, যার ফলে হার্টের নিজেরও অক্সিজেনের প্রয়োজন বৃদ্ধি পায়। যাদের হার্টে ব্লক আছে তাদের হার্ট প্রয়োজনের সময় অধিক রক্তের জোগান পায় না, কারণ ব্লক থাকায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ রক্ত হার্টের সব স্থানে পৌঁছাতে পারে না। হার্টে এ ধরনের অক্সিজেন সরবরাহের ঘাটতিজনিত অসুস্থতাকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বলা হয়। ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের প্রধান কারণ হার্টব্লক। হার্টের এ ধরনের অক্সিজেন কমতি বা ঘাটতির ফলে, বুকে ব্যথা, বুকে চাপ, বুক ধড়ফড় এবং শ্বাসকষ্ট বা পেরেশানের মতো উপসর্গ সৃষ্টি হয়ে থাকে, কিন্তু একটু বিশ্রাম নিলেই অক্সিজেনের চাহিদা বা প্রয়োজন কমে গিয়ে রক্ত সরবরাহের ঘাটতি ঠিক হয়ে যায়, যার ফলে ব্যক্তি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে তাত্ক্ষণিকভাবে এসব হৃদরোগের উপসর্গ থেকে পরিত্রাণ পেয়ে যায়। এজন্যই হৃদরোগে উপসর্গগুলোর এ ধরনের ম্যাজিক্যাল আচরণ পরিলক্ষিত হয়। অনেক সময় একই ধরনের কার্যকলাপের ফলে রোগী কোনো সময় উপসর্গে আক্রান্ত হয় এবং কোনো সময় আক্রান্ত হয় না। এর কারণ হিসেবে বেশ কিছু শারীরিক অবস্থাকে দায়ী করা যেতে পারে। খালি পেটে ফুসফুসের বায়ু ধারণক্ষমতা বেশি থাকার ফলে রক্তে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন প্রবেশ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর ফলে এটা পরিলক্ষিত হয় যে, হৃদরোগীরা খালি পেটে থাকা অবস্থায় অধিক পরিশ্রম করতে পারেন, অর্থাৎ ভরা পেটে তুলনামূলকভাবে অল্প পরিশ্রমেই উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়। কোনো কারণে টেনশনে পতিত হলে, রক্তে বেশ কিছু উত্তেজক হরমোন নিঃসরিত হয়, যার ফলে রক্তনালি কিছুটা সংকোচিত হওয়ায় অল্প পরিশ্রমে রোগী উপসর্গে পতিত হয়ে থাকে। এর বিপরীতে ব্যক্তি যখন ফুরফুরে মেজাজ থাকেন  তখন এ ধরনের উত্তেজক হরমোনের মাত্রা সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে, যার জন্য ফুরফুরে মেজাজকালীন রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহের বৃদ্ধি ঘটে এবং ব্যক্তি অধিক পরিশ্রমেও সহজে হৃদরোগের উপসর্গে আক্রান্ত হয় না। তাই সতর্ক হতে হবে।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট), সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর