মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রবীণদের কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা

প্রবীণদের কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা

মানুষের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা দিন দিন কমতে থাকে, যার ফলে প্রবীণ ব্যক্তিদের বেলায় বেশ কিছু অসুস্থতা প্রায় সবার মধ্যে দেখা দিয়ে থাকে। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের ব্লক বা হার্টের রক্ত সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বলা হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস, কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামক অসুস্থতা, অস্থিসন্ধির সমস্যা বা ক্ষয়জনিত বাতরোগ, হাড়ের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে গিয়ে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, চোখে ছানি পড়া, হাঁটতে-চলতে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়া বা মাথা ঘোরা, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদিই প্রধান অসুস্থতা। এসব অসুস্থতার মধ্যে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও তত্জনিত হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিস-জনিত হৃদরোগ দ্রুত প্রাণঘাতী অসুস্থতা বলে বিবেচিত হওয়ায় তাদের গুরুত্ব অন্যান্য অসুস্থতার চেয়ে অনেক বেশি। তাই এসব অসুস্থতা প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসার গুরুত্ব অনেক বেশি। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস কি কারণে হয়ে থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞান এসবের একক কারণ নির্ণয় করতে পারে নাই তাই এদের মাল্টিফেকটরিয়াল ডিজিজ বলা হয়ে থাকে। তার মধ্যে আছে বংশগত প্রবণতা, সামাজিক কারণ, জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস, আচার-আচরণগত কারণ, মানসিক উদ্বেগ, উত্কণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা ও ব্যক্তির মনমানসিকতা। এ ধরনের অসুস্থতা প্রতিকারের জন্য বেশ কিছু উপায় চিকিৎসা বিজ্ঞানে বর্ণিত আছে যেমন-জীবনের সর্ব পর্যায়ে শারীরিকভাবে সচল থাকা মানে বয়সভেদে নিরাপদ মাত্রায় কায়িকশ্রম সম্পাদন করা, যা ৮০-৯০ বছর বয়স্কদের জন্যও প্রযোজ্য। তার মানে জীবনের সব পর্যায়ে আপনি আপনার শারীরিক যোগ্যতা বজায় রাখুন। এ ক্ষেত্রে আপনি আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। শারীরিক ওজন সঠিক মাত্রায় বজায় রাখুন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করবেন না। খাদ্যে চর্বি বা তেলের মাত্রা সর্বনিম্ন মাত্রায় নিয়ে আসুন। পরিমাণমতো প্রোটিন গ্রহণ করুন। যেমন- ডাল, চর্বি ছাড়া মাংস, মাছ, সপ্তাহে ২টা ডিম, সপ্তাহে কমপক্ষে এক লিটার পরিমাণ দুধ, প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি, ফলমূল ও পানি। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ উভয় অসুস্থতার শেষ পরিণতি হিসেবে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়াকেই বোঝায়। তাই যারা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা প্রাথমিক পর্যায়ে হৃদরোগ নির্ণয়ের জন্য হৃদরোগের উপসর্গগুলোর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। হৃদরোগের প্রধান লক্ষণগুলো হলো বুকব্যথা, বুকেচাপ অনুভব করা, সহজে হাঁপিয়ে ওঠা বা শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা বা প্যালপিটিশন হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, পেটে অতিমাত্রায় গ্যাস উত্পন্ন হওয়া, পেট ভারী হয়ে যাওয়া। সাধারণভাবে পরিশ্রমকালীন সময়ে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, সহজে হাঁপিয়ে ওঠা বা বুক ধড়ফড় করতে থাকা এবং কারও কারও এ সময়ে শরীর অত্যধিক ঘামতে থাকে। তবে বিশ্রাম নিলে খুব দ্রুত এসব উপসর্গ কমে যায়। হৃদরোগ জটিল আকার ধারণ করলে উল্লেখিত উপসর্গগুলো বিশ্রামকালেও পরিলক্ষিত হতে পারে এবং তার সঙ্গে শরীর হাত-পা-মুখ ফোলে পানি আসতে পারে। পেট ফুলে যেতে পারে এবং পেটে অত্যধিক গ্যাস উত্পন্ন হতে পারে। প্রবীণ ব্যক্তিদের এসব উপসর্গ পরিলক্ষিত হলে দ্রুত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে সুচিকিৎসা গ্রহণ করা খুবই জরুরি।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট)

সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর