সোমবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

হৃদরোগ যখন বংশগত

হৃদরোগ যখন বংশগত

কিছুদিন আগে একজন রোগী দেখলাম বয়স ৪০ থেকে ৪২ বছরের মতো হবে। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। ভদ্রলোক বিগত চার-পাঁচ দিন যাবৎ বুকে ও পিঠে চাপের মতো অনুভব করছেন এবং স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এতে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এমনকি গোটা পরিবার বেশ চিন্তায় পড়ে গেছেন। সামান্য বুক-পিঠ ব্যথায় এত বেশি উদ্বিগ্নতা দেখে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম দুই-তিন মাস আগে তার বড় ভাই হার্টঅ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং দুই বছর আগে তার জন্মদাতা পিতাও হার্টঅ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এখন নিশ্চয়ই আর বুঝতে বাকি থাকল না যে, তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান। বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এটা স্পষ্ট হলো যে, রোগীর হার্টের দেয়াল পুরু হয়ে গেছে, তাও আবার সাধারণ মানুষের হার্টের দেয়ালের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ। এ ধরনের সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় কার্ডিওমাইওপ্যাথি বলা হয় এবং সচরাচর এসব রোগী সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকেন বা তারা নিজেরাও কখনো হার্টের অসুস্থতার কোনোরূপ লক্ষণ তার শরীরে বিদ্যমান আছে তা অনুভব করেন না। তবে এসব রোগী যদি কখনো অতিমাত্রায় পরিশ্রম করতে যান, তখন কারও কারও বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে বা অত্যধিক ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে, আবার এ সময় অনেকের বুক ধড়ফড় বা মাথা ঘোরাতে পারে। এ ধরনের লক্ষণকে সব সময় মারাত্মক হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। কার্ডিওমাইওপ্যাথি এমন এক ধরনের হৃদরোগ যাকে পুরোপুরিভাবে বংশগত হৃদরোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে এবং বংশগত অনেক হৃদরোগের মধ্যে কার্ডিওমাই-ওপ্যাথিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাবা অথবা মা যে কোনো একজনের কার্ডিওমাইওপ্যাথি রোগ থাকলে ৫০ ভাগ ছেলেমেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হবে এটা স্বতঃসিদ্ধ। কার্ডিওমাইওপ্যা-থিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তের সম্পর্কের সব আত্মীয়-স্বজনকেই ইকোকার্ডিওগ্রাম করে তাদের মধ্যে কার্ডিওমাইওপ্যাথি রোগ বিদ্যমান আছে কিনা তা নির্ণয় করে চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। আগেই বলেছি এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিক অবস্থায় সুস্থ সুন্দর জীবনযাপন করতে থাকেন এবং হঠাৎ তারা অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন এবং কারও কারও তাত্ক্ষণিক মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এসব রোগীর হঠাৎ মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যাওয়া। আমরা এও জানি হার্ট পাঁচ মিনিটের বেশি সময় বন্ধ থাকলে ব্যক্তির মৃত্যু অবধারিত। কার্ডিওমাইওপ্যাথিতে আক্রান্ত অনেক রোগীই অতি পরিশ্রমে বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও বুক ধড়ফড়ের মতো সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কারণ আমাদের হার্টের দেয়াল পুরু হয়ে যাওয়ার ফলে মাংসপেশির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে খাদ্য চাহিদা বা রক্ত প্রবাহের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরে রক্ত সরবরাহের মাত্রা সমান থাকলে প্রয়োজনের তুলনায় রক্ত সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। তবে রোগ নির্ণয় করে সুচিকিৎসার মাধ্যমে রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি এখন বহুলাংশে কমানো সম্ভব।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট)

সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর