মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাড়তি ওজন কমানোর মন্ত্র

বাড়তি ওজন কমানোর মন্ত্র

ছোট থেকে শুরু করে বড় এবং বৃদ্ধ সবারই এখন সমস্যাটা বেশি দেখা যাচ্ছে। এমনকি বড় বড় রোগের কারণ হিসেবে স্থূলতাকে দায়ী করা হয়। এখন স্থূলতা নিজেই একটি রোগ। অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ঘুমের প্রতিবন্ধকতা, নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার, অস্টিও আর্থারাইটিস, বিষণ্নতা, উচ্চ রক্তচাপ, ফ্যাটি লিভারসহ নানান রোগ হয়।

অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব এবং জেনেটিক সংবেদনশীলতার সমন্বয় দ্বারা সাধারণত স্থূলতা হয়। কিছু ক্ষেত্রে প্রধানত জিন, অন্ত্রের রোগ, ওষুধ বা মানসিক ব্যাধির কারণে ওজনাধিক্য হয়ে থাকে। মোটা মানুষ অল্প পরিমাণে খায়, তবে ধীর বিপাকের কারণে ওজন বৃদ্ধি পায় এমন দৃশ্যটি চিকিৎসাগতভাবে সমর্থিত নয়। স্থূলতা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ, তার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের এবং শিশুদের বৃদ্ধি হার বেশি। ২০১৫ সালে, ৬০০টি দেশে ৬০০ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক (১২%) এবং ১০০ মিলিয়ন শিশু মোটা ছিল। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে স্থূলতা বেশি। কর্তৃপক্ষ ২১ শতকের মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুতর পাবলিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখত। এখন আসল কথা হলো, কীভাবে এই বাড়তি ওজন কমানো যায়! স্থূলতা বা বাড়তি ওজন কমানোর জন্য দুটি পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। এর মধ্যে একটি হলো ডায়েট মেনে চলা অন্যটি হলো নিয়মিত এক্সারসাইজ করা। তবে মনে রাখতে হবে শুধু এক্সারসাইজ করে ওজন কমালে এটি বেড়ে যেতে পারে তখনই, যখন আপনি এক্সারসাইজ করা বন্ধ করে দেবেন। সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো প্রতিদিন একটা ব্যালেন্স ডায়েট মেনে চলা, সঙ্গে কিছু সময় এক্সারসাইজ করা। এখন মনে হতে পারে, কীভাবে ব্যালান্স ডায়েট মেনে চলবেন! যে ডায়েট এসব গ্রুপের খাবার দিয়ে ক্যালরি হিসাব করে করা হয় তাকে ব্যালেন্স ডায়েট বলে। ডায়েট ব্যাপার এলেই যে জিনিসটি বেশি খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো প্রত্যেকের জন্য এক রকম ডায়েট হবে না। প্রতিটি মানুষের বয়স, ওজন, উচ্চতা, লিঙ্গ এবং শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ডায়েট প্ল্যান আলাদা আলাদা হবে। অনেক সময় যদি কোনো মোটা ব্যক্তি কোনো রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে তার রোগের ধরন অনুযায়ী খাবার নির্ধারণ করা হয়।

যে বিষয়গুলো আপনি মেনে চললে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না : ১. প্রতিদিন সকালের নাশতায় উচ্চ প্রোটিন রাখবেন। কারণ একটি উচ্চ-প্রোটিন ব্রেকফাস্ট ওজন কমাতে সাহায্য করে, কারণ ক্ষুধার হরমোন নিয়ন্ত্রণে প্রোটিন হেল্প করে এবং মধ্যাহ্নভোজ পর্যন্ত আপনার ক্ষুধা বন্ধ করতে সহায়তা করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্রেকফাস্টের জন্য ডিম উচ্চমানের প্রোটিন, ভিটামিন ডি এবং কোলাইনের মতো অপরিহার্য পুষ্টির সমৃদ্ধ। এটি প্রোটিন, যা বিশেষ করে ওজন কমানোর জন্য হেল্প ফুল। তাই প্রতিদিন সকালে একটি ডিম সিদ্ধ রাখতে পারেন। ২. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। ৩. প্রতিবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে পানি পান করুন এবং খাওয়ার আধা ঘণ্টা পর কুসুম গরম পানি খান। এক গবেষণায় দেখা গেছে, তিন মাসে ৪৪% পর্যন্ত ওজন হ্রাস হতে পারে। ৪. ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণ করুন এবং সারা দিনের খাবারকে ছয় ভাগে ভাগ করুন। ৫. রাতে ভালো ঘুম দিন। ৬. ওজন কমাতে সাহায্য করে এমন খাবার প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখুন। ৭. বাইরের ভাজা, পোড়া খাবার প্রতিদিন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ৮. ভালো ফ্যাট যুক্ত খাবার যেমন, ওমেগা-৩, ৬ যুক্ত খাবার প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় অল্প করে রাখুন।

এভাবে প্রতিদিন আপনি নিয়ম মেনে খাবার গ্রহণ করলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

- সামিয়া তাসনিম, পুষ্টিবিদ, ল্যাব এইড পল্লবী শাখা এবং বনানী প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর