বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স স্বাস্থ্যব্যবস্থায় একটি অনাগত ঝুঁকি। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার (প্রায়ই শোনা যাচ্ছে) হয়েই চলছে। দেখা যাচ্ছে, একটা অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করলে অন্য অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে। কিছুকিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেটিও কাজ করছে না। তখন অধিক কার্যকরী এবং অনেক দামি অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হচ্ছে। ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস পাচ্ছে। সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে যে ফল পাওয়া সম্ভব ছিল, দেখা যায় অধিক কার্যক্ষমতা সম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারেও সে ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে অপব্যবহারের ফলে অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে এবং রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে। অনেক রোগীই আর্থিক অসঙ্গতির কারণে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে নিজেই ওষুধ বিক্রেতার কাছ থেকে অ্যান্টিবায়োটিক চেয়ে নিচ্ছে। অনেক ওষুধ বিক্রেতা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ বিক্রি করছে। এমনকি মাঝে মাঝে ভুয়া ডাক্তারের কথাও শোনা যায়। যাদের চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা কম, তারা উপযুক্ত মাত্রা এবং মেয়াদ সম্পর্কে না জেনেই রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছে, এটাও একটা খারাপ দিক। আবার অনেক রোগী কয়েকটা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে সুস্থতা বোধ করলে মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে দেয়।  মনে করে, ‘আমি তো ভালোই হয়ে গেলাম, ওষুধ খাবার আর দরকার কি’? এভাবে ওষুধের মেয়াদ পূরণ না করায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে এবং রোগীর বিপদও বাড়ছে। এছাড়া অধিকাংশ ফার্মেসি ডিগ্র্রিধারী বা উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট দিয়ে চালানো হয় না। প্রায়ই প্রত্যন্ত বা দুর্গম অঞ্চলে ডাক্তার না থাকায় এ ধরনের বিক্রেতারাই রোগীকে ব্যবস্থাপত্র এবং অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীর বয়স ও ওজন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় না। এমনকি খাবার আগে-পরে বা কতদিন খেতে হবে, তারও নির্দেশনা থাকে না বা রোগীকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলা হয় না। ফলে রোগীর শারীরিক এবং আর্থিক উভয় দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধে অবশ্যই সচেতনতা দরকার। ডাক্তারদের অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক লেখার সময় উপযুক্ত মাত্রা এবং মেয়াদের ব্যাপারে ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে। রোগীরা যেন যখন-তখন নিজে থেকেই বা ফার্মেসি থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ওষুধ কিনে না খান। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ওষুধ বন্ধ বা পরিবর্তনের আগে ডাক্তারকে অবহিত করতে হবে। শিশু, গর্ভবতী মা এবং বয়স্কদের ব্যাপারে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ওষুধ বিক্রেতাদেরও দায়িত্ব হলো প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক একেবারেই বিক্রি না করা।

লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ

মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর