সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

যে সব কারণে অ্যাজমা বাড়ে

যে সব কারণে অ্যাজমা বাড়ে

গ্রিক ভাষায় অ্যাজমা শব্দের অর্থ হলো হাঁ করে শ্বাস নেওয়া। গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস সর্বপ্রথম অ্যাজমা শব্দটি ব্যবহার করেন। অ্যাজমা বা হাঁপানি হলো এমন একটি শারীরিক অসুস্থতা যার দ্বারা সব বয়সের লোকজন আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত রোগীর ফুসফুসের শ্বাসনালি সাধারণ লোকজনের শ্বাসনালির তুলনায় অনেক বেশি স্পর্শকাতর অর্থাৎ সামান্য কারণেই শ্বাসনালি খিঁচুনি দেয়। অ্যাজমা রোগীর শ্বাসনালি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। এ জন্য কোনো উত্তেজক যেমন্ত ধুলাবালি, পশুপাখির স্পর্শ, ঠাণ্ডা, ফুলের রেণু ইত্যাদির সংস্পর্শে এলে এদের শ্বাসনালি হঠাৎ সংকুচিত হয়ে তীব্র শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে। অ্যাজমার লক্ষণসমূহ : দম বন্ধ অনুভূত হওয়া।  বুকের ভিতর বাঁশির মতো শাঁ শাঁ শব্দ অনুভব করা। বুক ভরে শ্বাস নিতে না পারা। অল্প পরিশ্রম করলে রোগী হয়রান অনুভব করবে।

কিছু তথ্য : পরিবেশের যেসব উপাদানে অ্যাজমার লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তাকে অ্যালার্জন বলে। নিম্নোক্ত কারণে অ্যালার্জন হয়ে থাকে— ১. পোকা- প্রাণী। ২. পশু-পাখির লোম। ৩. ধুলাবালি, বিশেষ করে ঘরের মাইট। ৪. ধূমপান। ৫. পোকা-মাকড়। ৬. ফুলের রেণু। ৭. আবেগ/টেনশন। ৮. ঠাণ্ডা আবহাওয়া। ৯. কিছু খাবার, যেমন- বেগুন, পুঁইশাক, চিংড়ি, ইলিশ, গরু, পাকা কলা, হাঁসের ডিম ইত্যাদি। ১০. কিছু ব্যথানাশক ওষুধ। শুধু এগুলোর উপাদান দ্বারাই অ্যাজমা হবে এমন কোনো কথা নেই। অ্যালার্জেন আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। অ্যাজমা অ্যালার্জিজনিত রোগ তাই এ রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায় হচ্ছে অ্যালার্জি থেকে দূরে থাকা। কোন জিনিসটাতে শিশুর অ্যালার্জিন পরিমাণ বাড়ছে খেয়াল করতে হবে। ট্যাবলেট বা ইনহেলার যে কোনো ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শক্রমে নিতে হবে।

শ্বাসকষ্ট : শ্বাসনালির ভিতর দিযে স্বাভাবিক অবস্থায় বাতাস সহজেই আসা-যাওয়া করতে পারে। যখন কোনো অ্যালার্জেন বা উত্তেজক জিনিস রোগীর শরীরে প্রবেশ করে তখন অসংখ্য হাজার ক্ষুদ্র শ্বাসনালিগুলোর মাংসপেশি সংকুচিত হয়। ফলে এই শ্বাসনালিগুলো সরু হয়ে যায়। অ্যালার্জির প্রভাবে শ্বাসনালির গ্রন্থি থেকে ভারী মিউকাস পদার্থ বের হয় যাকে আমরা কফ বলি। রোগীর শ্বাস নেওয়ার শেষে আবার শ্বাস ফেলতে বেশি কষ্ট হয়। আর সরু শ্বাসনালি দিয়ে বাতাস যাওয়া-আসার সময় বাঁশির মতো সরু হয়। তখন মিউকাসজাতীয় আটালো কফের কারণে অনবরত কাশি হতে থাকে। শ্বাসনালি এত সরু হয় যে, বাতাস বায়ুথলিতে পৌঁছে না; তখন শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে এবং কার্বন-ডাইঅক্সাইড জমা হতে থাকে। এ অবস্থাকে বলা হয় সিভিয়ার অ্যাকিউই অ্যাজমা। এ অবস্থা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলে অক্সিজেনের অভাবে বা কার্বন-ডাইঅক্সাইড অতিরিক্ত হওয়ার কারণে মৃত্যু ঘটতে পারে। তাই অ্যাজমা নিয়ে আমাদের অবহেলা করা ঠিক নয়।

অধ্যাপক ডা. একেএম মোস্তফা হোসেন, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর