মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

আইবিএস : পেটের পীড়া

আইবিএস : পেটের পীড়া

আইবিএস বা  Irritable bowel syndrome সমস্ত পৃথিবীতে একটা প্রচলিত রোগ ।  আইবিএস হচ্ছে পেটের পীড়ার কয়েকটি উপসর্গ বা লক্ষণের সমষ্টি । এই রোগে পেট অধিকতর স্পর্শকাতর হয় বলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্রিয়াশীল হয়ে থাকে । পাশ্চাত্যে প্রতি ১০০ জনে অন্তত ১০-১৫ জন এই রোগে ভুগে । এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন পুরুষের মধ্যে ২০ জন ও প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ২৭ জন এ রোগে আক্রান্ত । এখন পর্যন্ত এ রোগের প্রকৃত কারণ জানা যায়নি । তবে এটা খাদ্যনালীর বা অন্ত্রের একটা রোগ ।

সম্ভাব্য কারণ : বিভিন্ন কারণের মধ্যে খাদ্যনালীর অতি সংবেদনশীলতা, খাদ্যনালীর নাড়াচাড়ার (motility) অস্বাভাবিকতা বা অন্ত্র থেকে মস্তিস্কে পাঠানো বার্তায় ত্রুটির কারণে আইবিএস রোগের লক্ষণ দেখা যায় । এছাড়া অন্ত্রের প্রতিরোধ ব্যবস্থার পরিবর্তন,অন্ত্রের নিজস্ব জীবাণু (microbe) এর পরিবর্তন আইবিএস এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ।এছাড়া স্নায়ু চাপ, দুশ্চিন্তা ,খাদ্যভাস পরিবর্তন, হরমোনজনিত (নারীদের মাসিকচক্রের সঙ্গে) ও খাদ্যনালীর কোনো সংক্রমণের কারণে আইবিএস হতে পারে । সাধারণত ২০-৪০ বছরের মহিলাদের এবং মানসিক অস্থির প্রকৃতি পুরুষের মধ্যে আইবিএস এর প্রবণতা বেশি দেখা যায় ।

আইবিএস রোগের লক্ষণ: পেটের নিচের অংশের যে কোনো একপাশে বা মাঝখানে ব্যথা বা পেটের ভিতর অস¦স্তি , সেই সঙ্গ ঘন ঘন নরম মলত্যাগ অথবা দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য, পায়খানার পর পেটে স্বস্তি বোধ ইত্যাদি উপসর্গ যখন দীর্ঘদিন থাকে (৬ মাসের বেশি) তখন বলা যায় রোগটি আইবিএস হতে পারে । এছাড়া পেট ভরা ভরা লাগা, পেটে ভুট ভাট শব্দ করা, অতিরিক্ত বায়ু (flatus) ত্যাগ বা মলত্যাগের পরও মলাশয়ে কিছু রয়ে গেছে এই অনুভূতি, পায়খানার সঙ্গে অতিরিক্ত মিউকাস(আম) যাওয়া,  সকালের দিকে বা খাবার পর দ্রুত মলত্যাগের চাপ অনুভব করা আইবিএস রোগীদের অতিপরিচিত উপসর্গ ।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা: এ রোগ সাধারণত উপসর্গের উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা যায় । তবে বৃহদন্ত্রের অন্যান্য রোগ যেমন-বৃহদন্ত্রের টিউমার বা ক্যানসার, আইবিডি (অন্ত্রের প্রদাহ), সিলিয়াক ডিজিস (coeliac disease) ইত্যাদি রোগেও এই ধরনের অনুভূতি হতে পারে বিধায় আইবিএস রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হয় । তবে আইবিএস রোগীদের ক্ষেত্রে এসব পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক থাকে । পরীক্ষাগুলো হলো : রক্ত পরীক্ষা, মল পরীক্ষা, পেটের এক্স-রে,বেরিয়াম এনেমা এক্স-রে, কোলোনোস্কপি । কিন্তু যদি পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়ে, শরীরের  ওজন কমে যায় বা হঠাৎ বেশি পাতলা পায়খানার হয় তাহলে জরুরিভাবে কোনো গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে ।

চিকিৎসা: আইবিএস রোগের চিকিৎসার জন্য রোগীকে আশ্বস্ত করা চিকিৎসার খুব জরুরি একটি অংশ । আইবিএস একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ তবে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ রোগ নয়, সংক্রমক রোগও নয়, এ রোগের কারণে অন্ত্রের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা নাই- এ কথাগুলো রোগীকে ভালো করে বুঝাতে হবে । বর্তমানে আইবিএস এর চিকিৎসা উপসর্গভিত্তিক।

ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ, সহযোগী অধ্যাপক, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর