বাংলাদেশ প্রতিদিন : গ্রাহকরা কেন আপনাদের অফশোর ব্যাংকিং প্রোডাক্টে বিনিয়োগ করবেন?
সেলিম আর এফ হোসেন : গ্রাহকরা অবশ্যই অফশোর ব্যাংকিং প্রোডাক্টে বিনিয়োগ করার আগে অনেক বিষয় বিবেচনা করবেন। তবে, গ্রাহকরা যেসব কারণে ব্র্যাক ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং প্রোডাক্টে বিনিয়োগ করবেন, সেগুলো আমি এক এক করে তুলে ধরছি :
♦ ব্র্যাক ব্যাংকে সুশাসন এবং কমপ্লায়েন্সকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এভাবে আমরা আমানতকারীদের অর্থের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে থাকি;
♦ দেশি ও আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি থেকে বাংলাদেশে বিদ্যমান ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমরাই সর্বোচ্চ ক্রেডিট রেটিং অর্জন করেছি;
♦ বর্তমানে আমরাই দিচ্ছি গ্রাহকদের অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট প্রোডাক্টে সর্বোচ্চ মুনাফা;
♦ ব্র্যাক ব্যাংক দিচ্ছে একজন বিনিয়োগকারীকে তিনটি মুদ্রায় ডিপোজিট করার সুযোগ (ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড এবং ইউরো);
♦ আমাদের ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারী মাত্র ৫০০ ডলার, পাউন্ড বা ইউরো দিয়েই সেভিংস শুরু করতে পারবেন। এখানে বিনিয়োগকারীরা যত ইচ্ছা তত জমা রাখতে পারবেন। এ ব্যাপারে আমরা কোনো সীমাবদ্ধতা রাখিনি। এ ছাড়া আমানতকারীরা চাইলে সহজেই বাংলাদেশে তাঁদের অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন;
♦ আমাদের সঙ্গে অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় গ্রাহকদের দিতে হবে না কোনো চার্জ বা ফি;
♦ চাইলে গ্রাহক তাঁর জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ বিদেশে ট্রান্সফার করে নিয়ে যেতে পারবেন;
♦ গ্রাহকদের মুনাফা আয়ের ওপর দিতে হবে না কোনো ট্যাক্স বা আবগারি শুল্ক;
♦ প্রবাসীরা আমাদের ২৪/৭ ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা উপভোগ করতে পারবেন;
♦ আমাদের অফশোর ব্যাংকিং গ্রাহকরা ব্র্যাক ব্যাংক প্রিমিয়াম ব্যাংকিংয়ের মেম্বারশিপসহ এয়ারপোর্টে মিট অ্যান্ড গ্রিট সার্ভিস ও বলাকা লাউঞ্জে বিনামূল্যে প্রবেশের মতো আকর্ষণীয় সব সেবা উপভোগ করতে পারবেন; এবং
♦ আগ্রহী গ্রাহকরা খুব সহজেই ব্র্যাক ব্যাংকের অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করে আবেদন করার মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে ওবিইউ ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। এ ছাড়াও গ্রাহকরা আমাদের ডেডিকেটেড অফশোর ব্যাংকিং টিমের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ (০১৭৩০-০৫২০৪৭, ০১৭৬৬-৬৯৯০৮০) এবং ইমেইলেও ([email protected]) যোগাযোগ করার মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলাসহ যে কোনো ধরনের প্রবাসী ব্যাংকিং সেবা উপভোগ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : অফশোর ব্যাংকিংয়ে প্রাতিষ্ঠানিক আমানত আনার ব্যাপারে কী কী সুযোগ রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
সেলিম আর এফ হোসেন : আমি মনে করি, অফশোর ব্যাংকিংয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ রয়েছে। বিদেশে নিবন্ধিত ও পরিচালিত কোম্পানি এবং বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ওবিইউ ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে। অফশোর ব্যাংকিং প্রোডাক্ট নিয়ে আমরা অনেকদিন ধরেই কাজ করে আসছি। ফলে ব্র্যাক ব্যাংকে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ডিপোজিটের সবচেয়ে বড় পোর্টপোলিও। অফশোর ব্যাংকিংয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিভাগ (এ বি ও সি) করা হয় সাধারণত নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত মানদন্ডের ভিত্তিতে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশি ব্যাংকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বস্ততা সৃষ্টিতে আপনি কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন?
সেলিম আর এফ হোসেন : আপনি জানেন যে, প্রযুক্তির এই আধুনিক যুগে মানুষ সাইবার নিরাপত্তা, কমপ্লায়েন্স এবং সুশাসন নিয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন। কারণ, এগুলোর সঙ্গে গ্রাহকদের অর্থের নিরাপত্তা জড়িত। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় প্রয়োজন সরকারি সংস্থা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সমন্বয়ে রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্সের উন্নয়ন, স্বচ্ছতা এবং সুশাসনের উন্নয়ন, ব্যাংকিং অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং অনাবাসীদের কাছে দেশের বিনিয়োগ সুযোগগুলোকে তুলে ধরা। সরকার ইতোমধ্যে এ বিশেষ প্রোডাক্টটির সঙ্গে জড়িত চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে এবং অনাবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সহজ ও লাভজনক বিনিয়োগ ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
কিছুটা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকিং খাতে আস্থার নাম ব্র্যাক ব্যাংক গ্রাহকদের সর্বোচ্চ অফশোর ব্যাংকিং সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ, ব্র্যাক ব্যাংকের রয়েছে ব্যাংকিং খাতের সেরা পরিচালনা পর্ষদ, যাদের প্রচেষ্টায় রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স এবং নিয়মনীতি পালনে ব্র্যাক ব্যাংক সবসময় আপসহীন। গ্রাহকদের আস্থা রক্ষা এবং তাঁদের আমানতের সর্বোচ্চ নিরাপত্তাদানে আমাদের দেশব্যাপী সুনাম রয়েছে। গ্রাহকরা তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ ব্র্যাক ব্যাংকে জমা রাখার ব্যাপারে আমাদের ওপর সব সময় পূর্ণাঙ্গ আস্থা রাখতে পারেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : অফশোর ব্যাংকিং নীতি কীভাবে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করবে?
সেলিম আর এফ হোসেন : বাংলাদেশে নতুন ‘অফশোর ব্যাংকিং আইন ২০২৪’-এ গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে বেশকিছু বিধান রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন :
♦ গ্রাহকদের অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট দ্বারা অর্জিত সুদ বা মুনাফার ওপর কোনো ট্যাক্স কিংবা কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চার্জ দিতে হবে না। এর ফলে গ্রাহকরা সর্বোচ্চ মুনাফা আয় করার সুযোগ পাবেন।
♦ অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলোকে যথাযথভাবে লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য নির্দিষ্ট কিছু ক্রাইটেরিয়া পূরণ করতে হয়। যেমন, মূলধনের পর্যাপ্ততা, পরিচালনগত অবকাঠামো, অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং (এএমএল) নিয়মনীতি এবং নো ইওর কাস্টমার (কেওয়াইসি) পরিপালন পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত করতে হয়। এ জিনিসগুলো প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন এবং কমপ্লায়েন্সকে আরও জোরদার করে। ফলে গ্রাহকদের আমানত থাকে নিরাপদ।
♦ অফশোর ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, যা গ্রাহকদের তথ্য এবং বিনিয়োগকে করে আরও সুরক্ষিত।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে অফশোর ব্যাংকিং কীভাবে ভূমিকা রাখবে?
সেলিম আর এফ হোসেন : বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে অফশোর ব্যাংকিং উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
♦ যেহেতু গ্রাহকরা বিদেশি মুদ্রায় অর্থ জমা রাখবেন, সেহেতু এই ওবিইউ ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্টের ব্যালান্স ব্যাংকের ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ আরও সমৃদ্ধ করবে। এর ফলে বিদেশি বাণিজ্য অর্থায়নের বিস্তৃত প্রসার ঘটবে, যা অর্থনীতির ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়াও এটি বৈদেশিক বাণিজ্যকে আরও সহজ এবং সাশ্রয়ী করে তুলবে।