শিরোনাম
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৭:৫২

মুম্বাই হামলা: হেডলির স্বীকারোক্তিতে নতুন তথ্য

অনলাইন ডেস্ক

মুম্বাই হামলা: হেডলির স্বীকারোক্তিতে নতুন তথ্য

২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাই হামলার আগে আরও দুইবার হামলার চেষ্টা হয়েছিল কিন্তু তা ব্যর্থ হয়ে যায়। তৃতীয় বারের চেষ্টায় সেই হামলা সফল হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কারাগার থেকে ডিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুম্বাইয়ের মোকা আদালতে এই স্বীকারোক্তি দিলেন মুম্বাই হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত পাক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) সদস্য ডেভিড কোলম্যান হেডলি।

সোমবার মুম্বাইয়ের মোকা আদালতে বিশেষ বিচারক জি.এ.সনপের এজলাশে হেডলিকে জেরা করা হয়। সকাল ৭ টা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত চলে এই জেরা পর্ব। এই প্রথম বিদেশ থেকে কোনও জঙ্গির সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই বিশেষ মামলার সরকারি আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম। অপরাধ মওকুফ করার শর্তে মুম্বাই হামলার রাজসাক্ষী হতে রাজি হয়েছে পাক বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হেডলি।

নিজেকে এলইটি'র সক্রিয় সদস্য বলে দাবি করে জেরায় হেডলি জানায়, মোট আটবার সে ভারতে আসে। এর মধ্যে ২০০৮ সালে মুম্বাইতে ওই হামলার আগে আসে সাতবার এবং একবার আসে হামলার পরে। ২০০৮ সালের নভেম্বর ওই হামলা সংগঠিত করার আগে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে দুই বার হামলার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগারে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছে হেডলি। এদিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেরায় হেডলি স্বীকার করেন- ভারতে এসে হামলার সুবিধার জন্য নিজের নাম পরিবর্তন করেছিলেন তিনি। হেডলি বলেন, '২০০৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ফিলাডেলফিয়ায় নাম পরিবর্তন করার আবেদন জানিয়েছিলাম। এরপর ডাউড গিলানি থেকে ডেভিড হেডলি হয়েছিলাম এবং নতুন পাসপোর্টও পাই। যুক্তরাষ্ট্রের পরিচয়পত্র নিয়ে ভারতে প্রবেশ করি। তবে ভারতের আসার জন্য হেডলি ভিসার যে আবেদন করেছিলেন সেখানেও সম্পূর্ণ ভুয়া তথ্য জমা দিয়েছিলেন বলে এদিন সাংবাদিকদের জানান মহারাষ্ট্র সরকারের বিশেষ আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম।

হেডলি নিজেই জানান, মুম্বাই হামলার প্রধান চক্রী এলইটি প্রধান হাফিজ সঈদ এবং জাকিউর লকভি-এর আদর্শে প্রভাবিত হয়েই এই জঙ্গি সংগঠনে নাম লেখান তিনি। তাদের নির্দেশেই কাজ করতো হেডলি, তারাই হেডলিকে ভারত বিরোধী বক্তব্য রাখতে নির্দেশ দিয়েছিল।

পাকিস্তানের হাসান আবদাল ক্যাডেট কলেজ থেকে পাশ করে ১৭ বছর বয়সে য্ক্তুরাষ্ট্রে চলে যান হেডলি। ২০০২ সালে লস্করে যোগ দেওয়ার পর পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফরবাদে তার প্রশিক্ষণ হয়। সেখানে তাকে অত্যাধুনিক অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেয় লস্কর জঙ্গিরা। হেডলি জানান, নতুন পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই আমার লস্করের অন্যান্য সদস্যদের সাথে বিষয়টি আলোচনা করি যার মধ্যে সাজিদ মীর অন্যতম। মীরের সাথেই আমার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ভারতে আসার প্রধান উদ্যেশ্য ছিল এখানে এসে একটা অফিস খোলা যাতে আমি ভারতে বসবাস করতে পারি। ভারতে প্রথমবার আসার আগে মীরই আমাকে নির্দেশ দেয় মুম্বাইয়ের বিভিন্ন জায়গার ভিডিও ফুটেজ তুলে তা পাঠিয়ে দেবার।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করার ইচ্ছে ছিল যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী হেডলির, যদিও লস্করের কমান্ডার জাকিউর লকভি সেই সময় তাকে বিরত করে। এদিন দুপুরেই উজ্জ্বল নিকম সাংবাদিকদের জানান, 'জেরায় কাশ্মীরে মোতায়েন ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন হেডলি। কিন্তু সেসময় লকভিই তাকে সে কাজ করতে নিষেধ করে এবং হেডলিকে জানায় তার জন্য আরও রোমাঞ্চকর কাজ অপেক্ষা করছে।

২৬/১১ মুম্বাই হামলার পিছনে প্রথম থেকেই পাক যোগের কথা বলে আসছে ভারত। কিন্তু তা মেনে নিতে চায়নি পাকিস্তান। কিন্তু হেডলির এই বয়ানেই পাক যোগ এবং হাফিস সঈদের ভূমিকা একেবারে স্পষ্ট। হেডলির এই স্বীকারোক্তি ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
 
এদিকে হেডলির ওই স্বীকারোক্তির পর ভারতের সাবেক স্বরাষ্ট সচিব আর.কে.সিং বলেন, ''এই ঘটনার পর ভারতের জঙ্গি হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত থাকার প্রমাণ স্পষ্ট হয়ে যাবে। তাঁর অভিযোগ এর সঙ্গে আইএসআই এবং পাক সেনাও জড়িত, তাই একে স্টেট অ্যাকশন ছাড়া অন্যকিছু বলা যায় না।''
প্রসঙ্গত ২০০৮ সালে ২৬ নভেম্বর ভারতের বাণিজ্যনগরী মুম্বাইয়ে হামলা চালায় পাক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্যরা। প্রত্যেকের হাতেই ছিল অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্র। করাচি থেকে সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ে প্রবেশ করেছিল তারা। এরপর হামলা চালায় মুম্বাইয়ের তাজমহল হোটেল, হোটেল ওবেরয় ট্রাইডেন্ট, ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস, কামা হাসপাতাল সহ বেশ কয়েকটি জায়গায়। ওই দিনের জঙ্গি হামলায় ২৫ জন বিদেশিসহ নিহত হন ১৬৬ জন ভারতীয়, আহত হয়েছিলেন ৩০৪ জন।

বিডি-প্রতিদিন/০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর