২৭ আগস্ট, ২০১৬ ১৪:৫৩

জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ আনতে যাচ্ছে ভারত

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ আনতে যাচ্ছে ভারত

ফাইল ছবি

সন্ত্রাসীমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে বিতর্কিত ইসলামিক বক্তা জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জঙ্গি দমন ধারায় অভিযোগ আনতে যাচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। শুধু তাই নয়, তার ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনকেও (আইআরএফ) বেআইনি বলে ঘোষণা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, জঙ্গি মামলায় অভিযুক্ত অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের প্রতি উৎসাহ দেওয়ার পিছনে জাকির নায়েকের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকার গুলাশানে জঙ্গি হামলায় জড়িত দুই জঙ্গি জাকিরের বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল বলেও মনে করা হচ্ছে।

ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-এর শীর্ষ কর্মকর্তার মতে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জঙ্গি দমন ধারায় অভিযোগ আনার পেছনে প্রধান যুক্তি হল জঙ্গি কার্যকলাপের অভিযোগ আটক বেশ কয়েকজনের বক্তব্য। ওইসব আটক ব্যক্তিদের দাবি, তারা জাকির নাইকের বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। এসব কথা মাথায় রেখেই তার বিরুদ্ধে আনলফুল অ্যাক্টিভিটিস প্রিভেনশন অ্যাক্ট (ইউএপিএ) ধারায় অভিযোগ আনা হচ্ছে। ইউএপিএ ধারায় অভিযোগ এনে জাকিরের এনজিও ইসলামিক রিচার্স ফাউন্ডেশন বা আইআরএফ-কেও নিষিদ্ধ করে দেওয়ারও পরিকল্পনা করা হয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, এই সংগঠনের সদস্যরা প্রকাশ্যে বক্তৃতা, কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে বিদ্বেষ তৈরি করতো এবং জোর করে ধর্মান্তরিত করতো। এই আইনে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩-এ এবং ১৫৩-বি ধারায় সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগে শাস্তি হতে পারে।

আইআরএফ-কে বেআইনি ঘোষণা করা হলে সারা দেশে অবস্থিত এর প্রতিটি অফিসেই তালা পড়বে। আইআরএফ-এর হেড অফিস রয়েছে মুম্বাইয়ে, মুম্বাই ও চেন্নাইতে দুইটি ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলও পরিচালনা করে জাকিরের এনজিওটি, পাশাপাশি মুম্বাইতে প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে এই এনজিও’এর নামে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারও জাকিরের ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও অন্যান্য সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে।

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পরই জাকির নায়েকের নাম উঠে আসে। জানা যায়, হামলায় যুক্ত দুই জঙ্গি জাকিরের বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। বিষয়টি সামনে আসার পরই জাকিরের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয় বাংলাদেশ সরকার। একই সঙ্গে জাকিরের পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। জাকিরের বিরুদ্ধে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারও আলাদা করে তদন্ত শুরু করে। যদিও আটক হওয়ার ভয়ে সে সময় সৌদিতে অবস্থান করা জাকির আর ভারতে ফেরেননি। আপাতত তার দেশে ফেরার সম্ভাবনাও নেই বলেও মনে করা হচ্ছে।

তদন্তকারীদের হাতে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। আইআরএফ-এর সাবেক কর্মী এবং ২০০৬ সালে ঔরঙ্গাবাদ অস্ত্র মামলায় জড়িত সন্দেহে আটক ফিরোজ দেশমুখ জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন। ফিরোজের পাশাপাশি ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি কাতিল আহমেদ সিদ্দিকি, আইএস লিঙ্কম্যান আফসা জাবিন এবং গত জানুয়ারীতে আইএস সমর্থিত জঙ্গি সংগঠন জুনুদ-উল-খলিফা-ই-হিন্দ সন্দেহে এনআইএ’এর হাতে আটক মুদাব্বির শেখ, মহম্মদ ওবেইদুল্লা খান, আবু আনাস ও মহম্মদ নাফিস খান-প্রত্যেকেই জেরায় জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে বয়ান দিয়েছে বলে জানা গেছে।

বিডি-প্রতিদিন/২৭ আগস্ট, ২০১৬/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর