২৩ অক্টোবর, ২০১৬ ১০:৩৩

একটি দেশ ভাঙতে ৭ সেকেন্ডই যথেষ্ট!

আ স ম মাসুম, হাইতি থেকে :

একটি দেশ ভাঙতে ৭ সেকেন্ডই যথেষ্ট!

একটা দেশ দাঁড়াতে কতদিন লাগে- সেটার কোন সময় নির্ধারণ হয়নি। আর একটি দেশ ভাঙতে? মাত্র ৭ সেকেন্ডই যথেষ্ট! বিষয়টি পরিষ্কার বুঝে যাবেন ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র হাইতি দেখলে। ২০১০ সালে এক প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে হাইতি গুড়োগুড়ো হয়ে যায়।

৩ লক্ষ মানুষ মারা যায় এবং ঘরবাড়ি হারা হয় ২৫ লক্ষ মানুষ! ৪ লক্ষ বাচ্চা এতিম হয়ে যায়। সেই ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা। আবারও আঘাত হেনেছে হারিকেন ম্যাথিউ। হারিকেন ম্যাথিউতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা জেরেমি যেতে পাড়ি দিতে হয় ২৯০ কিলোমিটার তবে রাস্তা খারাপ হওয়ায় সময় লাগে প্রায় ৯ ঘণ্টা। লাকাই থেকে জেরেমি পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার সমুদ্র তীরবর্তী পাহাড়ি এলাকায় মারাত্মক আঁচড় দিয়ে গেছে হারিকেন ম্যাথিউ। দীর্ঘ যাত্রার রাস্তায় রাস্তায় দেখেছি মানুষের ঢল। স্বজনহারা আর ঘরহারা মানুষের হতবিহ্বল চেহারা।

হাজার হাজার মানুষের নেই বেঁচে থাকার কোন অবলম্বন। দেশটির দুর্নীতিবাজ সরকারের পক্ষে সম্ভব না ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে সাহায্য তুলে দেয়ার। বুমো নামে বিশাল পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে গুচ্ছ গ্রামগুলো যেনো ক্ষতবিক্ষত দেশ হাইতির কথাই বলছে। এটিই তো হাইতির আসল পরিচয়।

পাহাড়ের উপর থাকা কলা, কমলা আর নারিকেলের বাগান সব ধ্বংস হয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট, সেই সাথে নেই খাবার পানি। মাইলের পর মাইল শুধু ধ্বংসের লীলা।

রূপে-গুণে কোনভাবেই কম নয় এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি। একদিকে উত্তর আটলান্টিক সাগর আর অপর দিকে ক্যারিবিয়ান সাগর মোহনীয় সৌন্দর্য নিয়ে ঘিরে রেখেছে হাইতিকে। নীল আকাশের নিচে স্বচ্ছ নীল সাগর, সেই সাথে সবুজ পাহাড় চাদর বিছিয়েছে। মোহনীয় সুন্দরের এই দেশটির পর্যটন দাঁড়াতে পারেনি একদিকে আকর্ষনীয় মায়ামী সি-বিচ এবং অপরদিকে ল্যাটিন আমেরিকার সস্তা পর্যটন শিল্পের কারণে। সাথে থাকা স্থানীয় সরকারী মেডিকেল প্রফেশনাল ডা. জর্জ বলছিলেন দেশটির দুর্ভোগের কথা। যেদিন হারিকেন হয় এর পরদিন থেকেই তিনি রাজধানী থেকে চলে আসেন এইসব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়। চষে বেড়িয়েছেন শত শত মাইলজুড়ে। তিনি বলেন, এইসব মানুষের জন্য নেই ঈশ্বর, নেই সরকার! এরা স্রেফ বেঁচে থাকার জন্য বেচে আছে! এদের বেঁচে থাকা প্রতিনিধিত্ব করছে পৃথিবীর বঞ্চিত মানুষের! জৌলুসে ভরা একই আমেরিকার অন্য রূপ এটি।

ডা. জর্জের কথাগুলো একটু তাত্ত্বিক হলেও মিল খুঁজে পাই বাংলার বিখ্যাত লেখক মানিক বন্দোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস 'পদ্মা নদীর মাঝি'র সেই বিখ্যাত উক্তির সাথে – 'ঈশ্বর থাকেন ওই গ্রামে, ভদ্রপল্লীতে'।


ডা. জর্জের কথাকে তাই এভাবে বলা যেতে পারে, ঈশ্বর থাকেন মাত্র ৫৮০ মাইল দূরের ওই আমেরিকায়, এই হাইতিতে তাহাকে খুঁজিয়াও পাওয়া যাইবে না!

 

বিডি-প্রতিদিন/ ২৩ অক্টোবর, ২০১৬/ আফরোজ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর