২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৫:১৫

সব জায়গাতেই চক্রান্ত দেখছে মমতা ও তার দল

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

সব জায়গাতেই চক্রান্ত দেখছে মমতা ও তার দল

নোট বাতিল থেকে শুরু করে বিমান বিভ্রাট, টোল প্লাজায় সেনা মোতায়েন, আকাশ থেকে মাটি প্রতিটি জায়গাতেই চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস। ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরই প্রথম সরব হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ওই ঘটনার প্রতিবাদ করে মমতা বলেন, গুলি করে মারলেও সাধারণ মানুষের হয়ে তার লড়াই চলবে। 

গত বুধবার রাতে পাটনা থেকে কলকাতা ফেরার পথে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল জরুরি অবতরণের অনুমতি মেলেনি মমতাকে বহনকারী বিমানের।ওই ঘটনার পরই বিমানের কম জ্বালানি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা ওই বিমানের যাত্রী রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অভিযোগ তোলেন, 'নেত্রীকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করা হচ্ছে।' 

বিমান বিভ্রাটের ঘটনায় বুধবার রাত গড়িয়ে বৃহস্পতিবার সারা দিনই ঝড় বয়ে যায় ভারতের রাজনীতিতে। উত্তাল হয়ে ওঠে ভারতের সংসদ। ওই ঘটনায় ইন্ডিগোর তরফে জানানো হয়, বিমানে জ্বালানি কম থাকার ঘটনা ঠিক নয়, পাইলট ও এটিসির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মমতার বিমান বিভ্রাট নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয়ের সামনে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর টোল প্লাজাসহ কয়েকটি জায়গায় সেনাবাহিনীর মোতায়েন নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনায় মুখর হন  মমতা। এই ঘটনাকে জরুরি অবস্থার সামিল আখ্যা দিয়ে সেনাদের সরানোর দাবিতে সারা রাত নবান্নেই কাটিয়ে দেন মমতা। বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। 

মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ডানকুনি, পালসিট এবং মুর্শিদাবাদে টোল প্লাজায় গাড়ি থামিয়ে সেনা অভিযান চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষ ভয় পাচ্ছে। তার প্রশ্ন, এখানে সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে নাকি?  তবে কি অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থার পাশাপাশি গোটা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা হল? এ বিষয়ে সব রাজ্যকে নিয়ে প্রতিবাদে নামার ডাক দেন তিনি।

সেনার তরফে বলা হয়েছে, সরকারি নির্দেশানুসারে এটা রুটিন মহড়া। এতে উদ্বেগের কোন কারণ নেই। বিমান বিভ্রাট কিংবা টোল প্লাজায় সেনা মোতায়েন- দুইটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় তৃণমূল। 

শুক্রবার সংসদে এই বিষয় নিয়ে সরব হয় তৃণমূল কংগ্রেস। সংসদের দুইটি কক্ষেই এই নিয়ে হট্টগোল জুড়ে দেয় মমতার দল। তৃণমূলের বিক্ষোভকে সমর্থন করে কংগ্রেস ও বিএসপি। 

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শুখেন্দু শেখর রায় অভিযোগ করেন, সেনা নামিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়েছি, মোদির বিরুদ্ধেও লড়বো। প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে সেনাকে মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে বিষয়টি জানিয়েছি।

লোকসভার সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায় বলেন, রাজ্য না জানিয়ে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এটা তো যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত। 

এদিকে, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকর তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অভিসন্ধির অভিযোগ এনেছেন। তিনি জানান, গত বছর নভেম্বর এরকম রুটিন মহড়া হয়েছিল। চলতি বছরেও রুটিন মহড়া চালাচ্ছে সেনা। মহড়ার ব্যাপারে রাজ্যকে জানিয়েছিল সেনা। পরে পুলিশের কথায় দিন বদলের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এখন এই বিষয়টি নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করা হচ্ছে। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আচরণ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এখন যা হচ্ছে তা রাজনৈতিক উদ্যেশ্যপ্রণোদিত। এই ঘটনায় তৃণমূলের রাজনৈতিক হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। 

শুক্রবার সকালে ফোর্ট উইলিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে সেনার মেজর জেনারেল সুনীল যাদব জানান, শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, অাসাম, মেঘালয়, উত্তরপ্রদেশ, বিহারেও ঠিক এভাবেই রাজ্য পুলিশকে জানিয়ে টহল চলছে। এটা নতুন কিছু নয়। সেনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওনাকে তা প্রমাণ করতে হবে। 

বিডি প্রতিদিন/২ ডিসেম্বর, ২০১৬/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর