২৫ মার্চ, ২০১৭ ১৪:৪৫

ঠাকুরগাঁওয়ে সেচকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সোলার পাম্প

আব্দুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ে সেচকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সোলার পাম্প

বিদ্যুৎ বা ডিজেলের উপর নির্ভর না করে সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে সেচকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সোলার পাম্প। আর সোলার পাম্পের মাধ্যমে চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত ব্যয় ছাড়াই প্রায় ৫০ একর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের কৃষক সোলেমান আলী এতদিন বৈদ্যুতিক পাম্প ব্যবহার করে নিজের বোরো ক্ষেত ও নিজস্ব মাছের হ্যাচারিতে পানি সরবরাহ করে আসছিলেন। এতে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার টাকা বৈদ্যুতিক বিল পরিশোধ করতে হত। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি সোলার প্যানেল দিয়ে পানি সেচ দেয়ার পাম্প উদ্ভাবন করেন।

২০১৬ সালে তার সে প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখে। প্রথম দিকে তিনি ওই পাম্প দিয়ে পাঁচ একর বোরোর জমি ও মাছের হ্যাচারিতে পানি সরবরাহ করতেন। এবার চারটি সৌর পাম্প দিয়ে ৫০ একর জমিতে সেচ দিচ্ছেন তিনি।

সোলেমান আলী আগে সোলার আইপিএস তৈরি করতেন। দেশে সৌর সেচযন্ত্র চালু হওয়ার পর তিনি এই প্রযুক্তি আরও সহজলভ্য করার কাজ শুরু করেন। বাজারে থাকা সৌর সেচযন্ত্র সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। সৌর প্যানেল, কন্ট্রোলারসহ নানা যন্ত্রপাতি লাগিয়ে দ্রুতগতিতে পানি তুলতে পাম্পে যোগ করেন গিয়ারবক্স। আর এভাবে তিনি নিজেই তৈরি করেন সৌর পাম্প।

এজন্য ১০টি সৌরকোষ একত্রে সংযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে সৌর প্যানেল। প্রতিটি সৌরকোষের ধারণ ক্ষমতা ২৫০ ওয়াট। ওই সৌর প্যানেলের উপর সূর্যের আলো পড়তেই ভোল্টেজ তৈরি হয় এবং সংযুক্ত তারের মাধ্যমে এটি থেকে পাওয়া যায় বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে চলে একটি পাম্প। এই সেচযন্ত্র দিয়ে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জমিতে সেচ দেয়া যায়। সূর্যের তাপ যতই বাড়ে পানি ততই বাড়ে। দুই হাজার ৫০০ ওয়াটের সৌর প্যানেল দিয়ে মিনিটে ৭০০ লিটার পানি ওঠে।

সোলেমানের হিসেবে এক ওয়াট সৌরকোষের দাম পড়ে ৫০ টাকা। সে হিসেবে দুই হাজার ৫০০ ওয়াটের দাম পড়ে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। পানির পাম্প ও সোলারের অবকাঠামো তৈরিতে আরো ব্যয় ২৫ হাজার টাকা। একটি সৌর সেচযন্ত্র তৈরির খরচ পড়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা। আর তার উদ্ভাবিত প্রতিটি পাম্প বিক্রি করছেন দুই লাখ টাকা করে।

স্থানীয় চাষিরা জানান, বিদ্যুৎ চালিত নলকূপ দিয়ে জমিতে সেচ দিতে কার্ডে অগ্রিম টাকা রিচার্জ করতে হয়। তাছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে জমিতে সেচ দিতে না পারলে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। ডিজেল চালিত শ্যালো দিয়ে পানি সেচ দেওয়াও ঝামেলার। ডিজেল ছাড়া মেশিন চলে না এবং পানিও ওঠে না। একমাত্র সোলার পাম্পই ব্যতিক্রম। সোলার পাম্প থাকলে পানি তুলতে এক টাকাও লাগে না।

সোলেমান আলী জানান, একটি গভীর নলকূপ দিয়ে ৪০ একরের বেশি জমিতে সেচ দেওয়া যায় না। অথচ তিনি চারটি সৌর পাম্প দিয়ে ৫০ একর জমিতে সেচ দিয়েছেন। কাজেই সরকারি সহযোগিতা পেলে তিনি সারাদেশের বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ সূর্যের আলো দিয়ে চালিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে চান।

ঠাকুরগাঁও সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মাসুদুদুল হক জানান, সোলেমান আলীর উদ্ভাবন আমাকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এই সৌর সেচ যন্ত্রটি যদি কৃষক ব্যবহার করা শুরু করে তাহলে ডিজেল বা বিদ্যুৎ লাগবে না। কম খরচে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের মূল্যে পাবে। সোলেমোনের এই সৌর সেচ উদ্ভাবনের বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয়ে আমরা লিখিতভাবে পাঠিয়েছি।

বিডি প্রতিদিন/২৫ মার্চ, ২০১৭/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর