২৫ মে, ২০১৭ ১৮:৫১

আত্রাই-গঙ্গা নিয়ে মোদির কাছে অভিযোগ মমতার

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

আত্রাই-গঙ্গা নিয়ে মোদির কাছে অভিযোগ মমতার

ফাইল ছবি

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট শহরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা আত্রাই নদীর ওপর বাংলাদেশ অংশে বাঁধ দেওয়ার ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর মমতা সাংবাদিকদের জানান, 'উত্তরবঙ্গে আত্রাই নদী, পুনর্ভবা নদী আছে। ভারতকে জিজ্ঞাসা না করেই বাংলাদেশের সীমানায় ওই নদীর ওপর বাঁধ দেয়া হয়েছে। ফলে শুকনো মৌসুমে আমাদের এখানে পানি আসে না। আমাদের কৃষকরা অনেক কষ্টে রয়েছে। আবার যখন ওদের ওখানে পানি বেশি হয়ে যায় তখন সেটা ছেড়ে দেয়া হয়, ফলে আমাদের এখানে বন্যার পরিস্থিতি তেরি হয়। এই বিষয়টি দেখার জন্য কেন্দ্রকে জানিয়েছি।' 

বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের প্রসঙ্গটি তুলে মমতা বলেন, বাংলাদেশ আমাদের বড় বন্ধু, আমরা সব সময় তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলি। কিন্তু কখনো কখনো এমন কিছু ঘটনা ঘটে...জানিনা কেন হয়? 
বালুরঘাটের লাইফলাইন বলে পরিচিত আত্রাই নদীর ওপর বাংলাদেশের তরফে বাঁধ নির্মাণের ফলে এই নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। দেখা দিয়েছে তীব্র জলাভাব। 

পানি সমস্যায় পড়ছে বালুরঘাটের সাধারণ মানুষ। এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলেই মমতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এর আগে ২০১৫ সালেও আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে একবার চিঠি লিখেছিলাম কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। 

নদী সমস্যার জট ছাড়াতে গতকাল বুধবার বিকেলেই দিল্লিতে এসে পৌঁছন মমতা। বৃহস্পতিবার বিকেলে ৩.৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সচিবালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন মমতা। দুইজনের মধ্যে বৈঠক চলে প্রায় আধা ঘণ্টার মতো। বৈঠক শেষেই তিনি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। আত্রাই সমস্যার পাশাপাশি চুর্নী ও ফারাক্কা ইস্যুটি নিয়েও মোদির সঙ্গে আলোচনা করেন মমতা। 

চুর্নী নদী দূষণের জন্য সরাসরি বাংলাদেশের দিকে অভিযোগ তুলে মমতা জানান, বাংলাদেশে মাথাভাঙা নামে একটি নদী আছে। ওই নদীটাই যখন আমাদের নদীয়া জেলায় আসে সেটাকে চুর্নী নদী বলে। ওই নদীতে এত পরিমাণ দূষিত পদার্থ ফেলা হচ্ছে যে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলি সব দূষিত হয়ে যাচ্ছে। আমরা এই বিষয়টিকে সমাধানের কথা বলেছি। 

বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে কর বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলা থেকে বাংলাদেশে আম রফতানি করা যাচ্ছে না বলেও বৈঠকে মোদির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মমতা। 

মমতা বলেন, মালদা, মুর্শিবাবাদে অনেক আমের ফলন হয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার রফতানি কর দ্বিগুণ করে দিয়েছে।  ইলিশ মাছ তো আগেই বন্ধ হয়ে গেছে, আপনারা সবাই সেটা জানেন। এবার এখানকার আম যেটা ওদেশে রফতানি করা হতো তার ওপর কর দ্বিগুণ করে দেওয়ায় উৎপাদনকারীরা আর আম রফতানি করতে পারছে না। এই বিষয়টিও আমরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি।

এসময় ফারাক্কা প্রসঙ্গটিও তোলেন মমতা। তিনি বলেন বাংলাদেশের সঙ্গে যখন আমাদের গঙ্গা চুক্তি হয়েছিল তখন বলা হয়েছিল- যে কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের রুপি দেবে এবং গঙ্গা ভাঙন যাতে না হয় সেটাও দেখা হবে। কিন্তু সেই রুপি এখনো পাওয়া যায়নি, গঙ্গাকে পরিষ্কারও করা হয়নি। তার ফলে কত গ্রাম চলে গেছে মাটির তলায়। কৃষকদের প্রায় এক হাজার কোটি রুপির ফসল, সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে পানি না পাওয়ার ফলে কখনো কেন্দ্রীয় সরকারের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এনটিপিসি বন্ধ হয়ে যায়, কখনো পশ্চিমবঙ্গেও মানুষ পানি পায় না আবার কখনো বিহারে বন্যা হয়। এটা নিয়ে একটি মাস্টার প্লান তৈরির বিষয়ে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। 

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মমতা যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেন কয়েকদিন আগেই তার প্রতিটি বিষয়েই সম্প্রতি সরব হয়েছিলেন মমতা। গত মাসের গোড়ার দিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে তার সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। সেই বৈঠকে তিস্তার পানির বদলে তোর্সাসহ বিকল্প প্রস্তাব দেন মমতা। এরপর দিল্লি থেকে রাজ্যে ফিরে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় সভা করেন মমতা। প্রতিটি সভার থেকেই তিস্তা, আত্রাই, চুর্নী, আম নিয়ে রাজ্যের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছিলেন মমতা। 

মমতা এমনও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শিগগিরই এই বিষয়গুলি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জানানো হবে। সেই মতো আজ নদী সমস্যাসহ একাধিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি রাজ্যের দাবি-দাওয়া নিয়েও আলোচনা হয় মোদি-মমতার। তবে মোদি-মমতার একান্ত বৈঠকে তিস্তা প্রসঙ্গটি ছিল কি না তা যানা যায়নি। কারণ তিস্তা নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কোনো মন্তব্য করেননি মমতা। 

আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করবেন মমতা। বিরোধীদের তরফে সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ঠিক করতেই এই বৈঠকে বসবেন সোনিয়া-মমতা। দিল্লিতে আরো কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে মমতার। 

বিডি প্রতিদিন/ ২৫ মে ২০১৭/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর