২৯ মে, ২০১৭ ১৮:৩৭

গরু বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে রাজনৈতিক সরগরম ভারতে

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

গরু বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে রাজনৈতিক সরগরম ভারতে

ফাইল ছবি

ভারতের পশু হাটে জবাইয়ের জন্য গরু, মহিষ বিক্রির ওপরে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে রাজনৈতিক পারদ ক্রমশ চড়ছে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জবাইয়ের জন্য গবাদি পশু বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারির পরই এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত ২৭ মে কেরলে ‘বিফ ফেস্টিভ্যাল’এর আয়োজন করেছিল বাম পন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই। 

এর পাশাপাশি কেরল জুড়েই একাধিক স্থানে ওই ধরনের ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হয়। পরদিন রবিবারও রাজ্যের বিভিন্ন অংশে গরু জবাই করে ভোজের আয়োজন করে প্রতিবাদ করে কংগ্রেস। এনিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদও শুরু হয়েছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে কেরলের বাম নেতরা প্রকাশ্যেই বলছেন, খাওয়ার অভ্যাসের ওপরে কারও দাদাগিরি সহ্য করা হবে না। 

কেরলের পর এবার তামিলনাড়ুতেও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেও ঢেউ আছড়ে পড়ল। কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ‘বিফ ফেস্টিভ্যাল’-এ সামিল হল পাশের রাজ্য তামিলনাড়ুর মাদ্রাজ ইন্ডিয়ান ইন্সিটিউট অপ টেকনলোজি (আইআইটি)-র শিক্ষার্থীরা। রবিবার রাতে আইআইটির ক্যাম্পসেই প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী একটি বিফ ফেস্টিভ্যালে অংশ নেন। সূত্রের খবর, বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে তা শিক্ষার্থীর মধ্যে পরিবেশন করা হয়। আর এরপর থেকেই রাজ্য জুড়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। যদিও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন সকলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সামিল হয়েছে। 

 অভিনব সূর্য নামের চূড়ান্ত বর্ষের এক ছাত্র জানান, ‘আমরা কি খাবো, সেটা ঠিক করাটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার’। অভিনব আরও জানান, ‘এই ধরনের অনুষ্ঠানের আগাম কোন পরিকল্পনা ছিল না। দুপুরেই হঠাৎ করে আমাদের মাথায় আসে এবং সব শিক্ষার্থীদের বলে দেওয়া হয় যে গরু জবাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সবাইকে সামিল হতে হবে’। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের এই ধরনের প্রতিবাদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি আইআইটি কর্তৃপক্ষ।


এদিকে বিফ ফেস্টিভ্যালের মাঝেই নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে প্রকাশ্যে কংগ্রেস সমর্থকদের হাতে ষাঁড় জবাইয়ের ঘটনা। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রবিবারই কেরলের কান্নুরে যুব কংগ্রেসের কয়েকজন কর্মী প্রকাশ্যে একটি ষাঁড়কে জবাই করে বলে অভিযোগ। এরপর জবাইকৃত মাংস সকলের মধ্যে বণ্টন করা হয়। পরে পুরো ঘটনার সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাটি সামনে আসতেই তার নিন্দা জানান কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গান্ধী। ট্যুইট করে এই ধরনের ঘটনাকে ‘অবিচ্ছিন্নতা ও বর্বরোচিত’ বলে আখ্যায়িত করে রাহুল বলেন, ‘কেরলে যা ঘটল তা অবিচ্ছিন্নতা, বর্বরোচিত একটি কাজ, এটা কোন মতেই আমার কাছে এবং দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমি এই ঘটনার কঠোর নিন্দা জানাই’।

রাহুলের নিন্দা জানানোর পরই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে কংগ্রেস। এই ঘটনায় অভিযুক্ত যুব কংগ্রেসের তিন সদস্যকে দল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই ধরনের ঘটনা তারা সমর্থন করে না। সোমবারই অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির মুখপাত্র রণদীপ সুরযেওয়ালা জানান, ‘যারা এই ধরনের কাজ করেছে, দলে তাদের কোন জায়গা নেই। তাই দল থেকে অভিযুক্ত ওই কর্মীদের ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে’। 

কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রকাশ্যে ষাঁড় জবাইয়ের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিজেপিও। কেরলের বিজেপি সভাপতি কুমান্নাম রাজশেখরণ জানান নিষ্ঠুরতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। দিনের আলোয়, সকলের সামনেই যুব কংগ্রেসের কর্মীরা গরু জবাই করছে’। 

সব মিলিয়ে অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে একটি সমাধান সূত্র বের করতে অল পার্টি মিটিং ডেকেছেন সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন কেরলের এলডিএফ সরকার। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্যটির পরিবেশ মন্ত্রী ভি. সুনীলকুমার।

উল্লেখ্য কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী কৃষিকাজ ছাড়া কোন উদ্দেশ্যে(মাংস) গরু বা মহিষ বিক্রি করা যাবে না এবং তা করতে গেলেও অনুমতি লাগবে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে প্রভাব পড়বে মাংস, চামড়ার ব্যাবসায়। 

যদিও কেন্দ্রের পরিবেশ মন্ত্রী হর্ষ বর্ধণ জানিয়ে দেন, ‘সরকারের নতুন আইন খুবই নিদিষ্ট এবং পশু বাজার ও গবাদি পশু বিক্রির ওপর নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যেই তা আনা হয়েছে’।

বিডি-প্রতিদিন/২৯ মে, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর